৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্পের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট ব্যবহার স্থগিত রাখলো কোর্ট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৪-২০২৫
ট্রাম্পের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট ব্যবহার স্থগিত রাখলো কোর্ট ডিসি সার্কিট কোর্ট অব অ্যাপিলস


অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট ব্যবহার করে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করে দেওয়ার সাময়িক স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া সংক্রান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের আবেদন ২৬ মার্চ, ওয়াশিংটন ডিসি কোর্ট অব অ্যাপিলস প্রত্যাখ্যান করেছে। ২-১ রায়ে, কোর্ট অব অ্যাপিলস এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, যতদিন না আদালতে মামলার পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়, ট্রাম্প প্রশাসন এই আইন ব্যবহার করে অভিবাসীদের দ্রুত দেশে ফেরাতে পারবেন না।

এই মামলা আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ), ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ড এবং ডিসি এসিএলইউয়ের যৌথ উদ্যোগে দায়ের করা হয়েছিল। আদালতে, আইনজীবীরা আর্গুমেন্ট করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন ১৭৯৮ সালের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের অপব্যবহার করে অভিবাসী আইন ভেঙেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারিক পর্যালোচনা ও যথাযথ প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে। অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট, একটি শতাব্দী পুরোনো যুদ্ধকালীন আইন, যা প্রেসিডেন্টকে “ঘোষিত যুদ্ধ” বা “আক্রমণ বা শত্রু দেশ” থেকে আসা নাগরিকদের গ্রেফতার, আটক এবং নির্বাসিত করতে অনুমতি দেয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনকে অভিবাসন কার্যক্রমে ব্যবহার করায় তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি বলে আদালত অভিমত প্রকাশ করেছে।

এটি উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প প্রশাসন এই আইন ব্যবহার করে ‘ট্রেন ডি আরাগুয়া’ নামে একটি ভেনিজুয়েলা গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত অভিবাসীদের দ্রুত নির্বাসিত করার চেষ্টা করেছিল। অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী, কোনো বিদেশী দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অথবা আক্রমণ করে, তবে এই আইনটি ব্যবহার করে তাদের গ্রেফতার, আটক এবং নির্বাসন করা যেতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে কোনো যুদ্ধের মধ্যে নেই এবং এ কারণে আইনটির প্রয়োগের ভিত্তি নেই। ফলে আদালত এই ব্যবহারের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

এমনকি গত ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানে অভিবাসীদের নির্বাসিত করা হয়, যেটি অবৈধভাবে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছিল। যখন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক, জেমস বোয়াসবার্গ, জানিয়েছিলেন যে, কোনো বিমানের যাত্রীদের বহিষ্কার করা যাবে না, তখনো এই দুই বিমানে অভিবাসীরা চলে যায়। ফলে এই ঘটনার পর অ্যাপিলস কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া চলে।

এদিকে এসিএলইউয়র ইমিগ্র্যান্ট রাইটস প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর, লি গেলার্ট, আদালতের রায়ের পর বলেছেন, ‘এই রায়ের ফলে শত শত মানুষ এখন বিদেশি কারাগারে নির্বাসিত হওয়ার থেকে রক্ষা পেয়েছেন, যেখানে তাদের কোনো বিচারিক পর্যালোচনা বা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া রাখা হতো।’

ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট স্কাই পেরিম্যান জানান, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দেশের আইনের অধীনে বাধ্য এবং তাকে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ নেই যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের মধ্যে নেই বা আক্রমণের শিকার হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, যদি এই আইনের অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা মানবাধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে।

রায়ে বিচারকরা বলেন যে, সরকারের তরফ থেকে অভিবাসীদের নির্বাসন করে সরিয়ে নেওয়া হলে তারা হয়তো তাদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে জুলুমের শিকার হতে পারে। একজন বিচারক আদালতে মন্তব্য করেছেন, ‘যদি সরকার এই আদেশ স্থগিত করে দেয়, তাহলে অভিযোগকারীরা বিদেশি দেশে চলে গিয়ে নির্যাতিত হতে পারে। বিশেষত এ দেশে আসা অভিবাসীরা তাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিরোধের জন্য কঠোর শাস্তি পেতে পারে।’ এর মধ্যে একজন অভিবাসী দাবি করেছেন যে, তিনি ভেনেজুয়েলার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে বিদ্যুৎ শক ও শ্বাসরোধের মতো শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেছেন।

অন্যদিকে অ্যাপিলস কোর্টের বিচারপতি প্যাট্রিসিয়া মিলেট এবং ক্যারেন হেনডারসন আদালতের এই রায়ের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, যেটি এখনো কার্যকর থাকবে যতক্ষণ না পুরোপুরি মামলার বিচার না হয়। তবে বিচারপতি জাস্টিন ওয়াকার, যিনি ট্রাম্প দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত, তার একমাত্র অভিমত দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, মামলাটি টেক্সাস আদালতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্টের অপব্যবহার শুধু আইনের প্রতি অবজ্ঞা নয়, বরং এটি একটি গুরুতর আক্রমণ গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকারগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে যেখানে আইন, বিচার এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা অপরিহার্য, সেখানে ট্রাম্পের মতো এক ক্ষমতাবান ব্যক্তি যুদ্ধকালীন একটি শতাব্দী পুরোনো আইনকে অসাংবিধানিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন, যা এই দেশের আইনগত কাঠামো ও সামাজিক ন্যায়ের বিরুদ্ধে। এটি শুধু বেআইনি নয়, বরং মানবাধিকারের প্রতি চরম অবমাননা।

কোনো যুদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও এই আইনকে অভিবাসন বিষয়ে প্রয়োগ করার মাধ্যমে তিনি মানবতার মূল্যবোধকে পরিহাসে পরিণত করেছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে শত শত নির্দোষ মানুষকে দেশ থেকে বের করে তাদেরকে নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেওয়ার যে চেষ্টা, তা শুধু তার ক্ষমতার অপব্যবহার নয়, বরং মানবতার বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের আইনগত বেআইনি পদক্ষেপ শুধু আমাদের সমাজের মৌলিক অধিকারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং এই জাতির মৌলিক ন্যায়বিচার ও প্রক্রিয়াকেও ধ্বংস করে দেবে।

এই রায় প্রমাণ করে, কোনো প্রেসিডেন্টই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং জনগণের অধিকারকে সম্মান করা না হলে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আইন ও ন্যায়ের প্রতি বিরোধিতা, তেমনি এটা একটি নজিরবিহীন ক্ষমতার অপব্যবহার। এটি একটি রুক্ষ সতর্কীকরণ যে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।

শেয়ার করুন