১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:০৮:৪১ পূর্বাহ্ন


৭ লাখ অবৈধ অভিবাসীর ঠিকানা শেয়ারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান আইআরএসের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
৭ লাখ অবৈধ অভিবাসীর ঠিকানা শেয়ারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান আইআরএসের আইআরএস


আইআরএস ৭ লাখ অবৈধ অভিবাসীর ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, করদাতাদের গোপনীয়তা রক্ষার আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে তারা এই অনুরোধ পূরণ করতে পারবে না। যদিও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির উদ্দেশ্য ছিল এই তথ্য ব্যবহার করে অভিবাসন আইন প্রয়োগ করা এবং ডিপোর্টেশন বা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অভিবাসীদের শনাক্ত করা। আইআরএস তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জানায় যে, করদাতাদের গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স কোডের ৬১০৩ ধারায় বলা হয়েছে, করদাতাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং আদালতের নির্দেশ ছাড়া এই তথ্য অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে ভাগ বা শেয়ার করা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ। আইআরএস কমিশনার মেলানি ক্রাউসের বিবৃতিতে বলেছে, তারা করদাতাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিশ্চিত করতে চায় যে, সবাই আতঙ্ক ছাড়াই কর দাখিল করতে পারেন।

এ সিদ্ধান্ত অভিবাসী অধিকারকর্মীদের মধ্যে স্বাগত জানানো হয়েছে। অধিকারকর্মী বলছেন যে, যদি এই তথ্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে চলে যায়, তবে অভিবাসীরা কর ফাইল করা থেকে বিরত থাকতে পারেন, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। তবে ট্রাম্পপন্থী কিছু আইনপ্রণেতা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আইআরএসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান জানা গেলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হতো। এটি স্পষ্ট করে যে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন এবং কর ব্যবস্থা কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং জাতীয় নীতির এক জটিল সমীকরণ।

অবৈধ অভিবাসীরা কীভাবে কর ফাইল করে?

এজন্যই আইআরএসের কাছে তাদের বর্তমান ঠিকানাসহ সব তথ্য রয়েছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আইআরএসের কাছে ৭ লাখ অভিবাসীর ঠিকানা চেয়েছে। তবে, আইআরএস এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক অবৈধ অভিবাসী প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। তারা সাধারণত একটি পৃথক কর শনাক্তকরণ নম্বর ইনডিভিজ্যুয়াল ট্যাক্স পেআর আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ব্যবহার করেন। যা অভিবাসন স্থিতি নির্বিশেষে কর ফাইল করার সুযোগ দেয়। এই পদ্ধতি অভিবাসীদের কর ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত রাখে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ দেয়। আইআরএসের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসী কর দেন, যার মাধ্যমে সরকার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করে। যদিও তারা সোশ্যাল সিকিউরিটি বা অন্যান্য সরকারি সুবিধা পান না, তবুও তারা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং স্থানীয় পরিষেবায় পরোক্ষভাবে অবদান রাখেন।

সম্প্রতি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অভিবাসন আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্যে আইআরএসের কাছে ৭ লাখ অবৈধ অভিবাসীর ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্য চেয়েছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, এই তথ্য ব্যবহার করে তারা অভিবাসন নীতি কার্যকর করতে এবং নির্দিষ্ট অভিবাসীদের শনাক্ত করতে পারতেন, যাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন বা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এই তথ্য আমাদের আরো কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করতো।

আইআরএস এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স কোডের ৬১০৩ ধারায় করদাতাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা বাধ্যতামূলক। আদালতের নির্দেশ ছাড়া এই তথ্য অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে ভাগ করা আইনত নিষিদ্ধ। আইআরএসের কমিশনার এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা করদাতাদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি আমাদের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই, সবাই নিশ্চিন্তে কর দাখিল করুন, যেন তারা কোনো ধরনের আতঙ্ক ছাড়াই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেন। এই সিদ্ধান্তের পর অভিবাসী অধিকারকর্মীরা আইআরএসের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, করদাতাদের তথ্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে গেলে অভিবাসীরা কর ফাইল করা থেকে বিরত থাকতে পারেন, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের একজন প্রতিনিধি বলেন, অভিবাসীরা যখন কর দেন, তখন তারা স্থানীয় স্কুল, হাসপাতাল এবং জরুরি পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান করেন। যদি তারা ভীত হয়ে কর ফাইল করা বন্ধ করে দেন, তবে তা শুধুমাত্র অভিবাসীদের জন্য নয়, পুরো সম্প্রদায়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে, কিছু আইনপ্রণেতা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আইআরএসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, অবৈধ অভিবাসীদের অবস্থান জানা গেলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হতো। তবে গোপনীয়তা ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

আইআরএস ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মধ্যকার এই মতপার্থক্য যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোর একটি প্রতিফলন। যেখানে একদিকে জাতীয় নিরাপত্তা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংকটের সমাধানে কংগ্রেসের উচিত সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা, যা একদিকে নিরাপত্তার প্রয়োজন মেটাবে, অন্যদিকে অভিবাসীদের করব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত রাখবে। তবেই যুক্তরাষ্ট্র একটি আরও সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত অভিবাসন নীতি গড়ে তুলতে পারবে। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দেয়, অভিবাসন ও করব্যবস্থা কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এটি মানবাধিকার, নিরাপত্তা এবং জাতীয় নীতির গভীর এক জটিল সমীকরণ।

শেয়ার করুন