৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৩:০৮ অপরাহ্ন


প্যালেস্টাইনপন্থী ছাত্রদের অধিকার লঙ্ঘনে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৫
প্যালেস্টাইনপন্থী ছাত্রদের অধিকার লঙ্ঘনে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা গত এপ্রিল ২০২৪, নিউইয়র্ক সিটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্যালেস্টাইনপন্থী প্রতিবাদকারীদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন এনওয়াইপিডি অফিসার


কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্যালেস্টাইনপন্থী ছাত্র গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিম কোর্টে ছাত্রদের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন, চুক্তি ভঙ্গ, অবহেলা এবং অবৈধ উচ্ছেদসহ ১০টি অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, গত বসন্তে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে গাজা সংহতি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলন দমনের জন্য চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মামলার বাদীরা হলেন- ক্যাথরিন কাররান-গ্রুম, এডিয়ান পারিসি এবং ব্র‍্যান্ডন মারফি। তিনজনই ২০২৫ সালের বসন্তে স্নাতক হওয়ার কথা ছিল, তবে আন্দোলনের কারণে তাদের সাময়িক বরখাস্তের ফলে তাদের স্নাতক সময় পিছিয়ে গেছে। ৬৫ পৃষ্ঠার এ মামলায় কয়েক ডজন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত নিয়মাবলি উপেক্ষা করে বাদীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে দুটি ঘটনা- যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এনওয়াইপিডিকে ডেকে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করিয়েছে। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের টাইটেল সিক্স লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, এটি ক্যাম্পাসে বর্ণগতভাবে বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে এবং বাদীদের ও তাদের সহযোগীদের অ্যান্টিসেমিটিক, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক এবং বিশৃঙ্খল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশেষ করে কাররান-গ্রুমকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ তিনি একজন লেবানিজ-আমেরিকান এবং তার জাতীয় ও বর্ণগত পরিচয় সম্পর্কে সুরক্ষিত মতামত প্রকাশ করেছেন।

মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় টেডেস্কি বনাম ওয়াগনার কলেজ মামলার অধীনে সংরক্ষিত অধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের গৃহীত নীতিমালার যথাযথ অনুসরণ করতে বাধ্য করে, বিশেষ করে বরখাস্ত বা বহিষ্কার সংক্রান্ত বিষয়ে। বাদীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় টেডেস্কি-সংরক্ষিত অধিকার লঙ্ঘন করেছে কারণ তারা ২০২৪ সালের বসন্তে ‘রেজিস্ট্যান্স ১০১’ ইভেন্ট, গাজা সংহতি ক্যাম্প এবং হ্যামিল্টন হল দখলের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে পারিসি ও কাররান-গ্রুম একটি ক্যাম্পাস বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন এবং তারা এমন একটি দলের অংশ ছিলেন যাদের ওপর একটি দুর্গন্ধযুক্ত রাসায়নিক স্প্রে করা হয়েছিল। বাদীদের দাবি, এ হামলায় তারা গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। এ রাসায়নিক হামলা, এটি প্রথমবারের মতো দেখায় যে কলাম্বিয়া আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। পাবলিক সেফটি বিভাগ পরে নিশ্চিত করে যে, এ দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ ছিল একটি অ-বিষাক্ত, আইনি, নবল্টি আইটেম এবং এটি কোনো জৈব-রাসায়নিক অস্ত্র ছিল না, বিভাগের পক্ষ থেকে ৩০ আগস্ট ২০২৪-এ একটি আপডেটে জানানো হয়। মামলায় বলা হয়েছে, পারিসি বিক্ষোভের পরে মাথাব্যথা এবং কাররান-গ্রুম সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবিরাম বমি করার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্যান্স ১০১ নামে একটি ইভেন্টের কারণে কাররান-গ্রুম এবং পারিসিকে সাময়িক বরখাস্ত করে। মামলায় বলা হয়েছে যে, এ বরখাস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে, কারণ এটি রুলস অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের পরিবর্তে সেন্টার ফর স্টুডেন্ট সাকসেস অ্যান্ড ইন্টারভেনশন দ্বারা কার্যকর করা হয়েছিল। এ মামলায় গাজা সংহতি ক্যাম্পে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল সকালে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণ লনে ক্যাম্প স্থাপন করে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, সিএসএসআই কোনো প্রমাণ ছাড়াই বাদী মারফিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কাররান-গ্রুম, যিনি তখনও সাময়িক বরখাস্তের আওতায় ছিলেন, পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, যদিও পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করা হয়। কিন্তু ১৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে সিএসএসআই তাকে একটি ইমেইল পাঠিয়ে জানায় যে তিনি তার সাময়িক বরখাস্তের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন।

২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী হ্যামিল্টন হল দখল করে, জানালার কাচ ভেঙে এবং দরজাগুলো জিপ টাই দিয়ে বন্ধ করে দেয়, ঘোষণা করে যে তারা সেখানে থাকবে যতক্ষণ না কলাম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় তখনকার প্রেসিডেন্ট মিনুচ শাফিক নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে ভবন পরিষ্কার করার অনুমতি দেন। মামলায় বলা হয়েছে, এনওয়াইপিডি কর্তৃক অভিযানের সময় কাররান-গ্রুম গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ এনেছে এবং তারা মামলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার আইনি দৃষ্টান্ত স্থাপনের আশা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র চলমান মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বাদীরা দাবি করেছে যে, তারা আদালতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য, যার মধ্যে রয়েছে সুদের হার, আইনজীবীর ফি, অন্যান্য খরচ এবং ব্যয়সমূহ।

এ মামলাটি শুধু তিনজন ছাত্রের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নয়, বরং একটি বৃহত্তর লড়াই, যেখানে একটি প্রাচীন ও প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার দমনে দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। গাজা সংহতি ক্যাম্প আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোরপূর্বক ব্যবস্থা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি স্পষ্ট অবমাননা। নাগরিক অধিকারের প্রতি এমন অবজ্ঞা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য লজ্জাজনক, যা সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখানোর দায়িত্ব পালন করার কথা। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনাই এ মামলার একমাত্র গ্রহণযোগ্য পরিণতি হওয়া উচিত।

শেয়ার করুন