যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পগত ২৯ জানুয়ারি একটি বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রো-প্যালেস্টাইন মনোভাব প্রকাশকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এ আদেশের আওতায় যেসব শিক্ষার্থী প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বা ওই ধরনের মতাদর্শ প্রকাশ করেছেন, তাদের নির্বাসন দেওয়া হতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি আরো একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছে। আদেশটি ‘ঘৃণ্য মতাদর্শ প্রচার’ করার অভিযোগে বিদেশি নাগরিকদের নির্বাসনের ক্ষমতা দেয়। নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, ফেডারেল সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কার্যকলাপ নজরদারি করা। সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ছাত্র ভিসা বাতিল এবং নির্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। গত সপ্তাহের আদেশের সঙ্গে মিলিয়ে এ নতুন পদক্ষেপে মার্কিন প্রশাসনের লক্ষ্য প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনকে নির্মূল করা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ঘোষণায় বলেন, যেসব প্রবাসী ছাত্র প্রো-জিহাদিস্ট বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে, আমরা তাদের সতর্ক করছি: ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা তাদের খুঁজে বের করব এবং নির্বাসিত করবো। এ বক্তব্যের পর পরই শিক্ষার্থী, সিভিল রাইটস গ্রুপ এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেক নেতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সমালোচকরা মনে করছেন, এ আদেশ বিদেশি ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং এটি মূলত জেনোফোবিয়া দ্বারা প্রভাবিত।
ইসরায়েলের গাজার ওপর চলমান যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ হাজার প্যালেস্টিনিয়ান নিহত হয়েছেন। নতুন নির্বাহী আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, লেখালেখি এবং শিক্ষকদের পাঠদান পর্যবেক্ষণ করতে। সংশ্লিষ্টদের সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যেসব বিদেশি বাসিন্দা প্রো-জিহাদি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে, তাদের ২০২৫ সাল থেকে আমরা খুঁজে বের করে নির্বাসন দেবো। তিনি আরো বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে র্যাডিক্যালিজম দূর করতে হামাস সমর্থকদের শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করা হবে।
এক জায়োনিস্ট সংগঠন বেতার ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ১০০ প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থী এবং ২০ জন প্রফেসরের নামের একটি তালিকা জমা দিয়েছে। এ তালিকায় থাকা কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রার্থী মোমোদু টাল ইতিমধ্যেই প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনের জন্য নির্বাসনের হুমকির মুখে রয়েছেন। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে নেওয়া। তিনি আরো বলেন, যারা গণহত্যাকে সমর্থন করতে পারে, তাদের কাছে কাউকে নির্বাসন দেওয়া খুব বড় বিষয় নয়।
অভিবাসন আইনজীবী এরিক লি বলেন, এ আদেশগুলো কার্যত বিদেশি নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে প্রায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটির শাখায় পরিণত করতে চায়। তিনি আরো সতর্ক করেন যে, এ আদেশ শুধু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নয়, মার্কিন নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও হুমকির মুখে ফেলবে। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস এবং জুইশ ভয়েস ফর পিস এ নির্বাহী আদেশের তীব্র সমালোচনা করেছে।
জুইশ ভয়েস ফর পিস জানায়, এ পদক্ষেপ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ‘প্রজেক্ট এসথার’ রিপোর্ট থেকে নেওয়া হয়েছে, যা ফেডারেল সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে প্যালেস্টাইন সংহতি আন্দোলন এবং মার্কিন নাগরিক সমাজকে দমন করার একটি নীলনকশা। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ধ্বংস করার এবং মার্কিন-সমর্থিত ইসরায়েলি গণহত্যাকে সমর্থন করার একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। ক্যাম্পাসে নতুন সেমিস্টার শুরু হওয়ার পরও প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ আন্দোলন দমন করবে। মোমোদু টাল বলেন, এটি আন্দোলনকে স্তব্ধ করার একটি চেষ্টা। তবে আমি আশা করি মানুষ তাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকবে এবং বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে।