৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৮:২৩ অপরাহ্ন


প্রবাসের ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কী হবে!’
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০১-২০২৫
প্রবাসের ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কী হবে!’ হাবিব রহমান


আগস্ট বিপ্লবের পর থেকে বাংলাদেশের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বেশ বেকায়দায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে বলে তিনি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন দুই ব‍্যক্তি। আবেদনে তারা বলেছেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা নই। মিথ‍্যা বলে ভাতা নিয়েছিলাম। এজন‍্য দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে দু’জনের মতো আরো আবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কে যে সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তাদের কথাটাও সামনে চলে এসেছে। কারণ এ ভুয়াদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার। যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের দোষ স্বীকার করবে, তাদের বেলায় নমনীয় হলেও দোষ স্বীকার না করলে তাদের কপালে জেল-জরিমানা দুটোই জোটার সম্ভাবনা রয়েছে। এতোদিন যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রবাসে ঘাপটি মেরে থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তারা এখন কী করবেন, তা দেখার জন‍্য অনেকে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।

জো বাইডেনের বই কেনা নিয়ে জল্পনা!

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৯ নভেম্বর ম‍্যাসাচুসেটসের একটি বুক স্টোর থেকে নিজে গিয়ে একটি বই কিনেছেন। বইটির নাম ‘দ‍্য হানড্রেড ইয়ার্স ওয়ার উইথ প‍্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিনিদের ওপর শত বছরের যুদ্ধ)। বইটির লেখক রাশিদ খালিদি, একসময় ফিলিস্তিনি লিবারেশন সংস্থার সদস‍্য ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এই বই ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদের সহিংসতা ও ঔপনিবেশিকতার একটা প্রামাণ্য‍ দলিল।

নিউইয়র্কের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’ বাইডেনের এই বই কেনা নিয়ে তাদের ২৯ নভেম্বর তারিখের অনলাইন এবং ৩০ তারিখের প্রিন্ট সংস্করণে ছবিসহ বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেছে। তারা মন্তব্য করেছে, ‘যারাই বাইডেনের হাতে এই বইটা দেখেছে, তারা সবাই খুব বিস্মিত হয়েছে।’ তারা হোয়াইট হাউসের মন্তব্যও চেয়েছিল, কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। লেখক রাশিদ খালিদিও ‘নিউইয়র্ক পোস্ট’-এর সঙ্গে খুব বেশি কথা বলতে চাননি, তিনি শুধু পাঁচটা শব্দ বলেছেন, ‘চার বছর দেরি হয়ে গেছে।’

ইসরায়েলের সংবাদপত্র ‘জেরুজালেম পোস্ট’ নভেম্বরের ৩০ তারিখ শিরোনাম দিয়েছে, ‘বাইডেনেকে দেখা গেছে একটা ইসরায়েলবিরোধী বই হাতে, যেটাতে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’ প্রশ্ন উঠেছে বিদায়বেলায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি অনুতপ্ত? নিজের দলের এতো বড় হারের পর তিনি কি বুঝতে পারছেন, গত নির্বাচনে তরুণদের ও মুসলমানদের ভোট ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য প্রয়োজন ছিল! বাইডেন সেদিন যে বইটা কিনেছেন, এটা যদি চার বছর আগে কিনতেন, তাহলে গাজা যুদ্ধ কি অন্য রকম হতো? তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি চিরকালই ইহুদিবাদের ঘোর সমর্থক ছিলেন, এ বইটা পড়ার পর বাইডেন কি মত পাল্টাবেন? নাকি পুরোটাই তার লোক দেখানো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের এই বই কেনা নিয়ে কিছু যায়-আসে না। অবসর নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এমনকি ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বেও তার কোনো প্রভাব থাকবে না। তবে অন‍্য প্রেসিডেন্টদের জন‍্য এ থেকে একটা শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, তাহলো মধ‍্যপ্রচ্যের নীতিনির্ধারণের আগেভাগে বইটা পড়ে নিন, বাইডেনের মতো চার বছর দেরি করবেন না।

নিউইয়র্ক শহরে উজবেক খাবার

নিউইয়র্কে অনেক ভোজনবিলাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা সময় সুযোগ মতো একা বা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে সেখানে বৈচিত্র্যময় খাবারের সন্ধ‍ানে ঢুঁ মারেন। সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় আমার নির্দিষ্ট কলামে অন‍্যান‍্য খবরের সঙ্গে ভোজনবিলাসীদের জন‍্য খাবারের সন্ধান দিই মাঝেমধ্যে। এরপর থেকে প্রচুর কল আসে আমার কাছে। তাদের অনুরোধ মাঝেমধ্যে মাসে অন্তত দু-একদিন যেন বৈচিত্র্যময় খাবারের সন্ধান দেই।

এ সপ্তাহে আমি ভোজনবিলাসীদের নিয়ে যাবো উজবেক খাবারের দোকানে। আতিথেয়তায় মধ্য এশিয়ার মানুষের রয়েছে তুমুল খ্যাতি। খাওয়া যায় এমন হেন খাবার নেই, যা তারা ঘরে রাঁধেন না। উজবেক পোলাও, মান্টি, শুরপা, সাসলিক, লাগমান, সমুচা...খাবারের নামগুলোও যেন জিভে জল নিয়ে আসে, আর এগুলোর গন্ধ নাকে এলে নিজেকে সংবরণ করাই মুশকিল হয়ে যেতে পারে আপনার।

বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী উজবেক খাবার রান্নারই আছে কয়েক শতাব্দীর পুরোনো ইতিহাস। তুর্কি, কাজাখ, তাতার ও মঙ্গল প্রভাবের সঙ্গে স্থানীয় বাবুর্চিগিরির মুন্সিয়ানায় এসব খাবারের বৈচিত্র্য আপনাকে অভিভূত করবে। এমনকি একটি প্রাত্যহিক উজবেক ডিশেও এতো পদের খাবার থাকে যে আপনি চমকে উঠতে পারেন। টেবিলের এ মাথায় তা হয়তো শুরু হবে মিষ্টি, ফল আর সালাদ দিয়ে, এরপর আসবে স্যুপের পালা। বহু ধরনের স্যুপের মধ্যে জনপ্রিয় দুটি হলো শুরপা আর মাস্তাভা। আপনার পেট ইতিমধ্যেই ভরে গেলে আপনি হিসাব কষতে খুবই ভুল করেছেন! কেননা এবার আসবে আসল ডিশ-মান্টি, লাগমান, সাসলিক বা পোলাও।

সুগন্ধি চালের সঙ্গে ভেড়ার মাংস, পেঁয়াজ, গাজর ইত্যাদি দিয়ে রান্না করা এ খাবারের স্বাদ বলে বোঝানো সম্ভব নয়। মধ্য এশিয়ান খাবার এখন স্থানীয় মানুষের রসনা পূরণ করে বিশ্বের ধনী শহরগুলোর ভোজনরসিকদেরও তৃপ্তি মিটাচ্ছে। নিউইয়র্কে মধ্য এশিয়ান দেশ যেমন কাজাকিস্তান, কিরগিজস্থান, তাজিকিসস্থান তুর্কমেন এবং উজবেক মানুষ বসবাস করেন। এরা দেশ থেকে দূরে থেকেও দেশের খাবারের স্বাদ উপভোগ করেন।

নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি রেস্তোরাঁর নাম নার্গিস ক্যাফে। এটি একটি অথেনটিক উজবেক রেস্টুরেন্ট। এখানে উজবেকিস্থানসহ সেন্ট্রাল এশিয়ার নানা রকম খাবার পাওয়া যায়। একজন উজবেক এটি পরিচালনা করেন। খাবারের তালিকায় মাংস ও সবজিসহ ঘিয়ে রাঁধা পোলাও, মান্তি, সামসা, লাগম্যানসহ মধ্য এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য খাবার রয়েছে। ঠিকানা : ১৬৬৫ শিপ হুড বে রোড, ব্রুকলিন। ফোন: ৭১৮ ৮৭২ ৭৮৮৮।

গতানুগতিক পোলাও কিংবা বিরিয়ানি থেকে একটু আলাদা কিন্তু খেতে অসাধারণ একটি আইটেম হচ্ছে ‘উজবেক পোলাও।’ এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ উজবেকিস্তানের একটি আইটেম। স্থানীয়ভাবে এটি সিগনেচার ডিশ হিসেবে পরিচিত। নিউইয়র্কের উজবেক রেস্টুরেন্টগুলোও প্রবাসী উজবেকদের মিলনস্থল। এ যেন বিদেশের বুকে মাতৃভূমিকে খুঁজে পাওয়া। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ হাজার উজবেক বসবাস করেন। এদের বেশির ভাগই থাকেন নিউইয়র্কে, বিশেষ করে কুইন্স এবং ব্রুকলিনে। আর অল্প কিছুজন বাস করেন। ব্রুকলিনে মধ্য এশিয়ার খাবার পরিবেশন করে এমন আরেকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এটির নাম-চাইহোনা সালম। নার্গিসের প্রতিদ্বন্দ্বী এটি। রেস্টুরেন্টের দু’জন মালিকের নাম যথাক্রমে- মালিকমুরাট খোজিমাটভ এবং ফরিদা গানিয়েভ। তাদের ওখানে তাশখন্দ (উজবেকিস্তানের রাজধানী) তথা উজবেকিস্তানের পোলাও পাওয়া যায়।

চাইহোনা সালমের পোলাও নার্গিসের পোলাওয়ের চেয়ে আলাদা। এতে ভাতের ওপরে ভেড়ার মাংসের বড় বড় টুকরো, ডাইস করে কাটা গাজর এবং ওপরের দিকে সুন্দর করে ডিম সাজিয়ে রাখা থাকে। তাদের ঠিকানা: ১৬৫২ শিপহেড বে রোড, ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক-১১২৩৫ (ফোন: ৭১৮ ৩৩২ ২২০০)।

লং আইল্যান্ড সিটির সামি’স কাবাব হাউসের দুটি শাখায়ই উজবেক হালাল খাবার পাওয়া যায়। তাদের ওখানে উজবেক-কাবুল পোলাও ছাড়াও নানা পদের কাবাব পাওয়া যায়। শাখা দুটির ঠিকানা: ৩৫-৫৭ ক্রিসেন্ট স্ট্রিট এবং ৪৭-৩৮ ভার্নন রোড)।

উল্লেখ্য, সব উজবেক রেস্টুরেন্টের খাবারই হালাল। উজবেক খাবার নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার উজবেকদর নিয়ে একটু কথা বলি। উজবেকিস্তানের অধিবাসীদের বলা হয় উজবেক বা উজবুক। এই উজবুক কথাটি কিন্তু আমাদের দেশে বোকা অর্থে ব্যবহার করা হয়।

উজবুক শব্দটির অর্থ বোকা, আহাম্মক, আনাড়ি, মূর্খ ইত্যাদি। অনেকের মতে, উজবেকিস্তানের সঙ্গে ‘উজবুক’, ‘উজবক’, ‘উজবগ’, ‘উজবুগ’ শব্দের উৎপত্তিগত একটি সম্পর্ক রয়েছে। একটি শ্রুতি অনুসারে মধ্যযুগে মুসলিম বেশির ভাগ শাসকরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য উজবেকিস্তান থেকে ভাড়া করে সৈনিক আনতো। সে সময় তাদের সংক্ষেপে উজবেক বা উজবুক বলা হতো। এই উজবেক সৈন্যরা গায়ে প্রচণ্ড শক্তিশালী হলেও বুদ্ধি নাকি কম ছিল। ধীরে ধীরে লোকজন উজবেকিস্তানের সৈন্যদের বুদ্ধিহীনতাকে কোনো নির্বোধ লোকের উপমা প্রদানের জন্য উজবুক হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। আর এ উজবেক ক্রমান্বয়ে বাংলা অভিধানে স্থান করে নেয় ‘উজবুক’ শব্দটি থেকেই আহাম্মক বা বোকা লোক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে।

১২ জানুয়ারি ২৫

শেয়ার করুন