৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৬:২০ অপরাহ্ন


ড্রিমারদের থাকার বিষয়ে উপায় বের করতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করতে চান ট্রাম্প
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৪
ড্রিমারদের থাকার বিষয়ে উপায় বের করতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করতে চান ট্রাম্প বক্তব্য রাখছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প


যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করা সবাইকে বিতাড়িত করতে হবে, এমনকি তাদের আমেরিকান নাগরিক পরিবারের সদস্যদেরও প্রয়োজনে চলে যেতে হবে। ‘ড্রিমারস’ অবৈধ অভিবাসীরা যারা শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার নিশ্চয়তা দিতে আইন প্রণয়ন করা যায়। গত ৮ ডিসেম্বরে রোববার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জন্মগত নাগরিকত্বের অবসান ও ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেছেন।

ট্রাম্প আরো বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর অধীনে দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত জন্মগত নাগরিকত্বের অবসান ঘটাবেন। এর ফলে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করতে তিনি প্রস্তুত, যাতে ‘ড্রিমারস’-সেই অবৈধ অভিবাসীরা যারা শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল, তাদের দেশটিতে থাকার নিশ্চয়তা দিতে আইন প্রণয়ন করা যায়।

নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প তার অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্প ডিপোর্টেশনের বিষয়ে বলেন, এ কর্মসূচি শুরু হবে অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের দিয়ে। এরপর অপরাধী নয় এমন ব্যক্তিদের দিকে এগোবে। তবে কোন অপরাধগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা বিস্তারিত জানাননি। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এটা করতেই হবে। এটা করা খুব কঠিন বিষয়। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই নিয়ম, বিধি এবং আইন মানতে হবে। তারা অবৈধভাবে এসেছিল। আপনি জানেন, যারা প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে অবিচারের শিকার হয়েছে, তারা হলো সেই লোকেরা যারা ১০ বছর ধরে এই দেশে প্রবেশের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।

ট্রাম্প আরো বলেন, ‘অপরাধীদের আমাদের দেশ থেকে সরাতে হবে’। এরপর আমরা অন্যদের নিয়ে শুরু করবো এবং দেখবো কীভাবে এটি চলে। ওয়েলকার জিজ্ঞাসা করেন, এই অন্যরা কারা? ট্রাম্প জবাব দেন, অন্যরা হলো অপরাধী নয় এমন ব্যক্তিরা।

ট্রাম্প আরো এমন কিছু পরিস্থিতির বর্ণনা দেন যেখানে মার্কিন নাগরিকরা তাদের অবৈধ অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তার মন্তব্যে ভবিষ্যৎ প্রশাসনে সীমান্ত বিষয়ক জার হিসেবে মনোনীত টম হোমানের বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে। টম হোমান এক বক্তব্যে বলেছেন, মিশ্র অভিবাসন স্ট্যাটাসযুক্ত পরিবারগুলোকে একসঙ্গে বিতাড়ন করা হবে।

ওয়েলকার বলেন, আমি এমন একটি গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চাই, যাদের সংখ্যা প্রায় ৪ মিলিয়ন, যারা মিশ্র অভিবাসন স্ট্যাটাসযুক্ত পরিবার। আমি এমন বাবা-মায়েদের কথা বলছি যারা হয়তো এখানে অবৈধভাবে রয়েছেন, কিন্তু তাদের সন্তানরা এখানে বৈধভাবে রয়েছে। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, আমি পরিবার ভাঙতে চাই না, তাই পরিবার ভাঙার একমাত্র উপায় হলো তাদের একসঙ্গে রাখা এবং সবাইকে ফেরত পাঠানো।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সীমান্তে পরিবারগুলোকে আলাদা করার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়েও ওয়েলকার জিজ্ঞাসা করেন, যা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের নিরুৎসাহিত করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ট্রাম্প পরবর্তীতে এই প্রথার অবসান ঘটান। ট্রাম্প বলেন, আমাদের পরিবার আলাদা করার দরকার নেই। আমরা পুরো পরিবারকে খুব মানবিকভাবে তাদের আসল দেশে ফেরত পাঠাবো।

ওয়েলকার জিগ্যেস করেন, তাহলে আর কোনো পরিবার আলাদা করা হবে না? আপনি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনরায় চালু করছেন না? ট্রাম্প বলেন, এটি নির্ভর করে পরিবারটির ওপর। যদি তারা অবৈধভাবে এখানে আসে, কিন্তু তাদের পরিবার বৈধভাবে এখানে থাকে, তবে পরিবারটির জন্য দুটি বিকল্প থাকবে। যে ব্যক্তি অবৈধভাবে এসেছে সে বেরিয়ে যেতে পারে, অথবা সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।

জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি এটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাতিল করতে চান, যা অবিলম্বে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। ট্রাম্প বলেন, আমাদের এটি শেষ করতে হবে এবং এটিকে ‘হাস্যকর; বলে অভিহিত করেন।

ট্রাম্প দাবি করেন যে জন্মগত নাগরিকত্ব শুধু আমেরিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, আপনি জানেন, এটি কেবল আমাদের দেশেই রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস লাইব্রেরির একটি পর্যালোচনা অনুসারে, ৩০টিরও বেশি দেশে জন্মগত নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, যার মধ্যে কানাডা এবং ব্রাজিলও রয়েছে।

ড্রিমারদের প্রসঙ্গে ট্রাম্প তুলনামূলক নরম সুরে কথা বলেন। ড্রিমাররা হলো সেই ব্যক্তি, যারা ছোটবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল এবং ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) প্রোগ্রামের অধীনে অবস্থান এবং কাজ করার অনুমতি পেয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ড্রিমারদের বিষয়ে আমাদের কিছু করতে হবে, কারণ এরা এমন লোক, যারা অল্প বয়সে এখানে এসেছে এবং এদের অনেকেই এখন মধ্যবয়সী মানুষ। এরা নিজ দেশের ভাষাও জানে না । তিনি আরো বলেন, আমি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা করতে কাজ করবো। তাদের এখানে বহু বছর আগে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আর তরুণ নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে। তাদের ভালো চাকরি রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, তাদের ছোট ব্যবসা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বড় ব্যবসাও রয়েছে এবং আমাদের এ বিষয়ে কিছু করতে হবে।

শেয়ার করুন