ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের অফিসের পক্ষ থেকে গত ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বিচারক হুয়ান মারচানের কাছে এক আবেদন করা হয়। সেই আবেদনে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর মামলার কার্যক্রম নিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এই প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্কের প্রসিকিউটররা মামলার রায় বা কার্যক্রম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রসিকিউটররা আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার জন্য নতুন আইনি যুক্তি উপস্থাপন করবেন। তারা আরও জানান, আমরা প্রেসিডেন্ট অফিসকে গভীরভাবে সম্মান করি এবং ট্রাম্পের দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতাকে সম্মান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ায় জুরির ভূমিকার প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। এই কারণে তারা মামলা খারিজ না করে রায় স্থগিত রাখার বিষয়ে বিচারকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রসিকিউটররা রায় স্থগিত রাখার জন্য দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, ট্রাম্পের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার জন্য আবেদন করেছেন, যা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের অভিষেকের পর প্রেসিডেন্ট তার ইমিউনিটি নিয়ে নতুন আইনি প্রশ্ন উঠতে পারে, যা রায়ের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, এটি একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হওয়ার কারণে আইন ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাশ মানি মামলার সাজা পেছানোর প্রস্তাবের পেছনে মূল কারণ হলো ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়া এবং তার প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব গ্রহণ। প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ট্রাম্পের কর্মব্যস্ততা এবং আইনি পরিস্থিতি বিবেচনায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা প্রযোজ্য হবে। তাদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের জন্য সংবিধান ও আইন বিশেষ ধরনের সুরক্ষা প্রদান করে, যা আইনি কার্যক্রমের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাজা বা শান্তি কার্যকর করা যুক্তিসংগত এবং আইনসম্মত নয়।
এছাড়াও, ট্রাম্পের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা, প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে, যা তার আইনি কার্যক্রমে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তারা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত মামলার সিদ্ধান্তে বিলম্ব বা তার সাজা কার্যকর করা বাস্তবসম্মত নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্পের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছেন, যেখানে তারা দাবি করেছেন যে, রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন ট্রাম্পকে কোনো আইনি শাস্তি দেওয়া হবে না। তারা আরও বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ইলেক্ট এবং দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্টের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং মামলা ঝুলে থাকা “বিচার ব্যবস্থার স্বার্থের বিরুদ্ধে” যাবে।
এদিকে, ট্রাম্পের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর স্টিভেন চুয়াং দাবি করেছেন, এই মামলা ট্রাম্প এবং আমেরিকার জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিজয়। তিনি বলেন, “ম্যানহাটন ডিএ স্বীকার করেছে যে, এই ‘উইচ হান্ট’ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।” প্রসিকিউটর ম্যাথিউ কোলাঙ্গেলো বলেছেন, এটি একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি এবং এই মামলার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো যেন প্রেসিডেন্ট অফিস ও বিচার বিভাগের স্বার্থ রক্ষা করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যবসায়িক নথি জাল করার মাধ্যমে তার প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে ‘হুশ মানি’ প্রদানের বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা। এই অর্থ পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে প্রদান করা হয়েছিল, যিনি দাবি করেছিলেন যে ২০০৬ সালে তার সঙ্গে ট্রাম্পের একটি সম্পর্ক ছিল। ট্রাম্প এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন এবং এই মামলাকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
বিচারক হুয়ান মারচান, যিনি চলতি মাসের শেষের দিকে রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি যে মামলার কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত থাকবে কিনা। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হওয়ার ফলে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এবং প্রসিকিউটররা মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন, যা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর পুনরায় শুরু হতে পারে। তবে বিচারক মারচানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।