৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৩:২৫ অপরাহ্ন


ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট ,ভুরাজনীতির বাকবদল
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১১-২০২৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট ,ভুরাজনীতির বাকবদল


ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী ভারতীয় বংশোভূত কমলা হ্যারিসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হয়েছেন রিপাব্লিকান দলের প্ৰাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১২ হিলারী ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০১৬ হেরেছিলেন জো বাইডেনের কাছে। এবারে আবার জিতলেন কমলা হারিসকে হারিয়ে।

ইতিহাসের দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখি  ১৩২ বছর পর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৮৮৮ সালে হেরে যান। ঠিক চার বছর পর ১৮৯২ সালে আবার নির্বাচনে জিতে তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে ১৩২ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন অবশ্যই ভুরাজনীতিতে বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে। অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলী আগ্রাসন বন্ধ ,রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ।

বিশ্ব জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র- চীন অর্থনৈতিক যুদ্ধ কোনপথে  মোড় নিবে সেটি অতি সহসাই দৃশ্যমান হবে. কয়েকদিন পরে আজারবাইজানের বাকুকে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে আঁচ পাওয়া যাবে ডোল্যান্ড ট্রাম্প ফিরে আসা বিশ্বকে কোন দিকে ধাবমান করবে। বাংলাদেশের মত দেশের এই বিষয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনার কারণ আছে বলে মনে করি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ খুব একটা অগ্রাধিকার সেটি ভাবার কোন কারণ দেখি না। কারো বিমর্ষ হওয়া বা কারো উৎফুল্ল হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাই না। ট্রাম্পের প্রাধিকার থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে গতিময় করা। যুদ্ধ থেকে সরে আসা। রাশিয়া ,চীন ,ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা। মনে হয় না ইসরাইলিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হবে ,অথবা প্যালেস্টাইনীদের ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন হবে।


বাংলাদেশে ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনে হয়তো বাইডেন সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রভাব ছিল। সেই কারণে হয়তো ভারত সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কিছুটা টানপোরণ সৃষ্টি হয়েছিল। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধিকার চীনের আঞ্চলিক প্রভাব সীমিত করা। সচরাচর বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকা সরকার থাকুক সেটি যুক্তরাষ্ট্র চায়। কিন্তু তাই বলে ভারতের একান্ত অনুগত সরকার থাকতে হবে সেটির বাধ্যবাদকতা চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে অনির্বাচিত সরকার যতদ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক সেটি চাইবে যুক্তরাষ্ট্র।


একথা ঠিক ডেমোক্রাট দলের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধান নোবেল লরিয়েট ডক্টর এম ইউনূসের বিশেষ সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্কের জের ধরে জাতিসংগের বিভিন্ন সংস্থা থেকে উদার অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া হয়তো সহজ ছিল. সেটি হয়ত সঙ্গত কারণে অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ে পড়বে।  ট্রাম্প নিজে ধনকুবের ব্যাবসায়ী।  চাইবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিনিরা ব্যবসা করুক ,বিনিয়োগ করুক। সেই সূত্রে বাংলাদেশের জ্বালানী বিদ্যুৎ খাত ,পরিবেশ ,শিল্প খাতে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে. যথাযথ ভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা করা হলে বড় ধরণের মার্কিন বিনিয়োগ আসতে পারে। কিন্তু এটি ভাবা কখনো সমীচীন হবে না নতুন মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরাসরি কোন নতুন মতবাদ চাপিয়ে দিবে।


ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আছে। হয়তো নতুন সরকার ভারতের লেন্স দিয়ে বাংলাদেশকে দেখতে চাইবে। বাংলাদেশ ভারত সুসম্পর্ক বজায় থাক সেটি হয়তো চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ যেন খুব বেশি চীন নির্ভর না হয় সেই দিকে হয়ত সচেতন থাকবে ট্রাম্প প্রশাসন। বঙ্গোপসাগরে গ্যাস তেল অনুসন্ধানে কিভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলো আসে ,কিভাবে বিনিয়োগ করে সেটি থেকেও বাংলাদেশে মার্কিন প্রভাব বোঝা যাবে।
ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের অবসানে রিপাব্লিকান প্রশাসন ক্ষমতায় আসায় নিঃসন্দেহে ভুরাজনীতির বাক বদল হবে। পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির পটভূমিতে আগের  ট্রাম্প আর এবারের ট্রাম্প হয়তো পরিবর্তিত হবে। বাংলাদেশের এই বিষয় নিয়ে খুব উৎকণ্ঠার কারণ দেখি না।

বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের ভাগ্য কিভাবে নির্ধারণ করবে সেটি নিয়েই ভাবনা থাকা সমীচীন।

শেয়ার করুন