৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৮:১৭ অপরাহ্ন


ভারত বিরোধিতা, ভারত তোষণ দুটিই পরিত্যাজ্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১০-২০২৪
ভারত বিরোধিতা, ভারত তোষণ দুটিই পরিত্যাজ্য বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। অনাদিকাল থেকেই মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা সম্প্রীতির সঙ্গে সহ অবস্থান করছে। ধর্ম যার যার হলেও বাংলাদেশের কালচারে কিছু উৎসব মোটামুটি সবাই একসঙ্গে পালন করে আসছে। এক ধর্মের লোকজন অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করেছে। কখনো কটূক্তি করেনি কেউ কাউকে। এ এক চমৎকার সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল। কিন্তু এহেন সামাজিক পরিবেশ সত্ত্বেও কিছু সাম্প্রদায়িক মানুষ, তথা সুবিধাবাদীদের কারণে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভারতের মত ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ধর্মের নামে এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের হত্যাযজ্ঞ খেলায় কখনো মেতে ওঠেনি বাংলাদেশে।

গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বা ভারত তোষণ দুটিই রাজনৈতিক স্বার্থেই দৃষ্টিকটু রূপ ধারণ করেছে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ভারত তোষণ বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় সর্বসাধারণের মনে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের প্রভুসুলভ মনোভাব তিক্ততায় সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সব কিছু নেবো, কিন্তু ভাগ করবো না এই ধরনের ভারতীয় মনোভাব ভারতবিরোধী মনোভাবের অন্যতম প্রধান কারণ।

ভারত বাংলাদেশ বৃহত্তম প্রতিবেশী, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়তাকারী দল। সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে ভারতের প্রতি সৌহার্দ্যরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত, কিন্তু তার ২৫ শতাংশ করেনি। সীমান্তে নিয়মিত হত্যা করা হচ্ছে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের, বাংলাদেশের অনেক সাড়া জাগানো হত্যাকা-ে ভারতের সম্পৃক্ততার গুজব আছে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন ভারতের উদাসীনতার কারণে অমীমাংসিত রয়ে গাছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে যোগাযোগের জন্য জানালা-দরজা খুলে দেওয়া হলেও ভারত চিকেন দিয়ে ভুটান নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ বা বাণিজ্য উন্মুক্ত করছে না। বাংলাদেশে হিন্দুদের পূজা-পার্বণ নিরাপদে সম্পাদনে আপামর জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা করলেও ভারতে মুসলমানরা কতটুকু নিরাপদে আছে বিশ্ববাসী জানে।

বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার পর সম্পর্ক নতুনভাবে মূল্যায়নের সুযোগ এসেছে। দুটি দেশের সম্পর্ক দুটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত। ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে ছোট দল, বড় দল বলে কিছু নেই। দুটি বন্ধু দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের স্বার্থে অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা এবং পানি বণ্টন বিষয়ে সমতাভিত্তিক সমাধান হয় জরুরি। উভয়ের স্বার্থে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সহায়তাসহ শিল্পবাণিজ্য। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া বিষয়ে সহায়তা সম্প্রসারণ হওয়া জরুরি। দুটি দেশের মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে উভয় দেশকে। ফলে একজন খাঁটি বাংলাদেশির উচিত ভারত বিরোধিতা, ভারত তোষণ দুটিকেই ঘৃণার চোখে দেখার। 

শেয়ার করুন