সাবেক সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন আহমেদ
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সাবেক সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও গুমসংক্রান্ত্র কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অপর কর্মকর্তা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন ও মেজর জেনারেল (অব.) মো. সারোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে আরো অজ্ঞাত তিন-চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার লিখিতভাবে ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এম সারোয়ার হোসেন। এর আগের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার একই অভিযোগ গুমসংক্রান্ত কমিশনেও দাখিল করেন তিনি।
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন মিডিয়াকে বলেন, সাত সাবেক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছি। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। তারা একসময় আমার সহকর্মী ছিলেন। তাদের ভেতর কোনো মানবতাবোধ নেই। তারা যে কোনো মানুষকে গুম বা মেরে ফেলতে পারে। অভিযোগে তাদের দৃষ্টান্তমূলক উপযুক্ত শাস্তি চেয়েছি।
অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামি কর্তৃক অপহরণ ও গুম করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন। অভিযোগে তিনি নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন সারোয়ার হোসেন। ঘটনার স্থান ঢাকা সেনানিবাস ডিজিএফআইয়ের সদরদপ্তর দেখানো হয়েছে।
অভিযোগ দাখিলকারী আইনজীবী সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বৈরাচারের দোসর, গুম-খুনের হোতা, গোপন বন্দিশালা (আয়নাঘর নামে পরিচিতি পাওয়া) সৃষ্টিকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে গুম করার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর চা পানের কথা বলে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদরদপ্তরে ডেকে নিয়ে যান। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় সেখানে তাঁকে গোপন বন্দিশালায় নেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে ১১ ঘণ্টা আটকে রেখে তাঁকে ছেড়ে দেয়।
সারোয়ার হোসেন জানান, তিনি ২০ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পর স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে ২০০৭ সালে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ২০০৮ সালে থেকে তিনি সুশাসন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছেন। অভিযোগে তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তিনি যেহেতু গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের কথা বলেন এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের সমালোচনা করেন, সেজন্য ওই তিন সেনা কর্মকর্তা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
সাবেক সেনাপ্রধান শফিউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ এবং ২০২৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সহযোগিতা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করার অভিযোগ আনেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে সারোয়ার হোসেন ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিজিএফআইতে চাকরির সময় অগণিত মানুষকে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পাতানো নির্বাচনে সহায়তা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করা এবং পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর হওয়ার অভিযোগ এনেছেন। মেজর জেনারেল (অব.) মো. সারোয়ার হোসেনের বিষয়ে অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক থাকাকালীন তিনি গুম, খুনসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সংঘটিত করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন। তিনিও ছিলেন পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম দোসর।
