১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৪৬:০৪ পূর্বাহ্ন


শহরে স্বস্তিতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে স্থপতি ইকবাল হাবিব
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
শহরে স্বস্তিতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে স্থপতি ইকবাল হাবিব


বাপা’র সহ-সভাপতি, স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, পরিবেশের সাথে সহাবস্থান নয়, বরং পরিবেশকে ধবংসের মাধ্যমেই দেশে নগরায়ন প্রক্রিয়া ধাবিত হচ্ছে। আর এসব কারণে এককালের ছিমছাম, উদ্যান ও পার্ক সম্মৃদ্ধ, খাল-ঝিল ও পুকুরে পরিপূর্ণ, সবুজ ও সজল এই শহরগুলো এখন সময়ের সাথে সাথে স্বস্তিতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

বাপা’র “স্থায়িত্বশীল নগরায়নে পরিবেশের গুরুত্ব পর্যালোচনা এবং এ’বিষয়ক সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব পুস্তিকা’র উন্মোচন” শিরোনামে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঢাকায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ উপলক্ষে এ আলোচনা সভা বাপা’র সহ-সভাপতি, মহিদুল হক খান এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক, আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাপা’র সহ-সভাপতি, স্থপতি ইকবাল হাবিব।

সভায় নির্ধারিত বিষয়ের উপর আলোচনা করেন, বুয়েট-এর নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক, ড. ইশরাত ইসলাম এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক, অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

এতে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক যথাক্রমে মিহির বিশ্বাস, হাসান ইউসুফ খান, এবং হুমায়ুন কবির সুমন, বাপা নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান ও এ্যড. পারভীন অক্তার, জাতীয় কমিটির সদস্য, একরাম হোসেন, হাজী আনসার আলী, নাজিম উদ্দীন প্রমূখ।

স্থপতি ইকবাল হাবিব আরো বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে নগরায়ন সংকটের সম্মুখীন। দেশব্যাপী ক্রমাগত দখল এবং দূষণে শহরগুলোর সবুজ ও জলজ অংশসমূহ বিলীন হয়ে পড়ছে। ফলে উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান, ও চিত্ত-বিনোদনের মুক্ত সুযোগসমূহ অপসৃত হচ্ছে।

মহিদুল হক খান বলেন, দেশের পরিবেশকে সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতির কথা সরকার বড় গলায় বললেও বাস্তব চিত্র অন্য। প্রতিনিয়তই আমরা পরিবেশকে ধংস হতে দেখছি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায়। আমরা বর্তমান পরিবেশ মন্ত্রীর নিকট প্রত্যাশা করি তিনি দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
 
ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিশ্রুতগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার মূল্যায়ণ ও জবাব চাওয়া। এসডিজি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় এলিমেন্টসগুলো লক্ষ্য করে দেখা যাচ্ছে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জন থেকে। আমাদেরকে আগে পার্ক ও মাঠের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। দুটো এক জিনিস না। কিছু স্বার্থান্বেষী মাঠ ও পার্কের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে চায় না। তিনি যথাযথ ড্যাপ বাস্তবায়ন এবং দেশের উপজেলার মাস্টার প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দাবী জানান।
 
অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর ৮ মাস। পরিবেশ মন্ত্রীর ১০০ দিনের কর্ম পরিকল্পানার কথা বলা হলেও কার্যত কোন কর্মসূচি দেখা যাচ্ছেনা। পরিবেশগত সুশাসন প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। নির্মাণ কাজের সময় ব্যপবভাবে বায়ুদূষণ সৃস্টি করে। ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি দূষণরোধে স্বল্প, মধ্য ও দির্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবী জানান।

আলমগীর কবির বলেন, দেশের নগরগুলোকে সুন্দর করতে হলে প্রথমে দেশের কর্তাব্যক্তিদের মনের পরিবর্তন প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবহিতাই পারে দেশের পরিবেশ সুরক্ষা করতে। বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সম্পুর্ণ ব্যর্থ। তিনি বলেন পরিবেশ অধিদপ্তর অকার্যকার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের ফলে ঢাকার দূষণ বেশি হচ্ছে এবং এই দূষণ কমানোর জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করার দাবী জানান। ঢাকাসহ সকল খেলার মাঠ ও পার্কগুলোকে দখলমুক্ত করার দাবী জানান তিনি।

মিহির বিশ্বাস বলেন, পলিউটার পে নীতির যথাযথ ও কঠোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পানির জন্য ঢাকা শহরে একশতটি পুকুর খননের দাবির পাশাপাশি যারা সবুজায়ন করবে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রনোদনার ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন।

আলোচনা সভা তেকে বাপা’র পক্ষ যে দাবী তুলে ধরা হয় তার মধ্যে রয়েছে নগর এলাকাসমূহের পাশাপাশি সকল সড়ক ও মহাসড়ক-এ বৃক্ষশুমারী পরিচালনা এবং বৃক্ষ সংক্রান্ত ডাটাবেজ প্রণয়নের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক প্রকল্প বা কর্মকান্ডের অজুহাতে বৃক্ষ কর্তন নিয়ন্ত্রণ করা।  বন ও বনভূমি সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর/ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ, প্রণোদনা ও আইনভঙ্গকারীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত সরকারী পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর ‘সবুজায়ন নীতিমালা’র ভিত্তিতে সংরক্ষণ নিশ্চিত করে ভারসাম্যপূর্ণ এবং দেশজ বৃক্ষ রোপন ও লালনের কর্মসূচি কার্যকর করার পাশাপাশি ‘নগর বন’ সৃষ্টির ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা। পাশাপাশি ব্যক্তি ও কর্পোরেট ভিত্তিক সবুজায়ন ও বনায়ন উদ্যোগকে প্রণোদিত ও কখনো কখনো বিশেষভাবে উৎসাহিত করার প্রয়াস নিতে হবে।  ক্রম সংকুচিত কৃষি জমি সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান অকৃষি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে আনুভূমিক উন্নয়নে প্রলুব্ধির কারণে কৃষি জমির উপর চাপ সৃষ্টি না হয়।

শেয়ার করুন