১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৪:৪৪ পূর্বাহ্ন


১১ জানুয়ারীর কর্মসূচীতে আমাদের দল সতর্ক পাহারায় থাকবে
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন -তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন -তথ্যমন্ত্রী


তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে ভারত শুধু তাদের সীমান্ত খুলে দেয়নি, ঘরের দুয়ারই খুলে দেয়নি, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল। নিজে না খেয়ে বা কম খেয়ে এ দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থীদের তারা খাইয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সেটি আমাদের দেশের মানুষ মনে রাখবে। 

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে ৬ থেকে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফররত ৩৪ ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং উর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, '১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দুই দেশের মৈত্রী রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরা, এদেশের সমস্ত নাগরিক, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব তাদের ভূমিকার জন্য।' 

কলকাতার ২৫ জন ও আসামের ৯জন সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, 'আপনারা বাংলাদেশের কিছু অংশ ঘুরে দেখেছেন এবং নিশ্চয়ই বাংলাদেশে যারা ১২-১৪ বছর আগে এসেছিলেন, তারা পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। এমন কি দু’বছর আগেও যিনি এসেছিলেন, দু’বছর পরেও অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান। আমাদের দেশের মানুষ এই পার্থক্যটা খুব একটা বুঝতে পারে না। কারণ সবাই উন্নয়নের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু যে ছেলে ১৪ বছর আগে বিদেশ গেছেন, সে এসে তার শহর চিনতে পারে না, তার গ্রামও চিনতে পারে না -এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।' 

বাংলাদেশকে সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, 'আমাদের দেশে যে সামাজিক সম্প্রীতি, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি, বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি -এটি অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন- ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা সেটিই লালন করি, বুকে ধারণ করি। সে কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর উৎসবের মাত্রা বাড়ে। গত বছর দুর্গাপূজা মন্ডপের সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে কয়েকশ’ বেশি ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রে সহায়তা করে নানাভাবে।' 

পরিতাপের সুরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের দেশে আছে, অন্যান্য দেশেও আছে। দু:খজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে সেই অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। আপনারা দেখুন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যখন যেখানেই ছড়ানো হয়েছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিকে বিস্তৃত করেছে বিএনপি ঘরানার লোকজন, তাদের সমর্থক, তাদের নেতারা, তাদের কর্মীরা। সমস্ত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি জোটের সদস্য।' 

'এটি আমাদের জন্য দু:খজনক কারণ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে বাঙালিদের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার জন্য  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না' দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন হাছান মাহমুদ। 

কোনো গুজব যেন সাম্প্রদায়িক বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে সে জন্য সকল সাংবাদিকের সহযোগিতা কামনা করেন ড. হাছান। তিনি বলেন, 'দেখা গেল ভারতের কোনো একটি অনলাইন ভিত্তিহীন একটি  সংবাদ করে দিল, সেটি নিয়ে ভারতেও মাতামাতি শুরু হলো আবার সেটা কপি করে আমাদের এখানে কিছু অনলাইন, কিছু পোর্টাল গুজব ছড়াল। এগুলোর কারণে  সমাজে মাঝে মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ব্যাপারে আমাদের উভয় দেশের সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।' 

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান এ সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তিনি ভারতের সহায়তা কামনা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে জানান এবং অর্থনীতির প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বলে দেয় এ দেশ থেকে অর্থনৈতিক কারণে কোনো প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ ঘটার কোনো কারণ নেই।

ভারতীয় সাংবাদিকদের পক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন, 
'আজকের ১০ জানুয়ারি দিনটা শুধু মাত্র বাংলাদেশের কাছে বিশেষ দিন নয়, এটা ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের কাছে একটা বিশেষ দিন। কারামুক্তির পর এই দিনেই স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন। আর এই দিনে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে পেরেছি সে জন্য আমরা অত্যন্ত গৌরবান্বিত।' 

এবং এ দিনের ইতিহাসটা আবার মনে করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সে সময় বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন কি না দীর্ঘদিন ধরে এটাও একটা সংশয় ছিল। আমরা আমাদের বাবা-মা'র কাছে সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।'

আসামের আঞ্চলিক সংবাদ টিভি চ্যানেল প্রাগ নিউজে'র প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত রাজগুরু তার বক্তব্যে তাদের আমন্ত্রণ করে একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখাবার জন্য তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, 'ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার ভ্রমণ আমাদের নয়ন খুলে দিয়েছে।'

বই পর্ব

মতবিনিময় শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতীয় সাংবাদিকদের জন্য 'সচিত্র বঙ্গবন্ধু', 'সংবাদ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু', 'হিউমেইন বাংলাদেশ' (Humane Bangladesh), 'টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ' ও 'বাংলাদেশের পর্যটন' -এই পাঁচটি গ্রন্থের একটি করে সেট কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক এবং দৈনিক আমার আসাম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মনোজ কুমার গোস্বামীর হাতে তুলে দেন মন্ত্রী। 

কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি ও সম্পাদক এসময় তাদের প্রেস ক্লাব থেকে প্রকাশিত 'অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ববঙ্গের মহিয়সীরা' গ্রন্থটি তথ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর কলকাতার সাংবাদিক সুমন ভটাচার্য সম্পাদিত  'শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ' সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী ও সচিব। 




যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হওয়া অত্যন্ত দু:খজনক মানবাধিকার লঙ্ঘন : তথ্যমন্ত্রী  


যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে এমআইটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সালের মৃত্যুকে অত্যন্ত অনভিপ্রেত, দু:খজনক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রেও যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই হত্যাকান্ড।'

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।  
 
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, 'আমি পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি ছাত্রের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে, তদন্ত চলছে। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যারা এই ঘটনার জন্য দোষী, তাদের বিচার হবে।'

হাছান মাহমুদ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার যাতে রক্ষিত হয়, সেটিই আমরা চাই। আমাদের দেশে যেমন মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয়, কেউ লঙ্ঘন না করে, সেদিকে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। বিশ্বময় কোথাও যেন মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় সেটিও আমরা চাই।'

তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশ সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তা রিয়ার এডমিরাল লাউবেখার বলেছেন, বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী এবং যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। 

'আদালত স্বাধীন বলেই মুক্তি পেলেন ফখরুল-আব্বাস'

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার জামিনে মুক্তি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব এবং মির্জা আব্বাস সাহেব যে মুক্তি পেয়েছেন এতেই প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের আইন আদালত স্বাধীন। কারণ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল, তারা আইনি লড়ায়ের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায়  মুক্তি লাভ করেছেন। দেশের আইন আদালত অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কাজ করে, সেই কারণেই তারা মুক্তি লাভ করেছেন। আমি তাদের দু'জনের সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ আয়ু কামনা করি।  তারা যাতে সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে সরকারের বিরোধিতা করতে পারে, সেটিই আমি কামনা করি।'

১১ তারিখেও আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবো-তথ্যমন্ত্রী

বুধবার ১১ জানুয়ারি বিএনপির দেশব্যাপী গণ-অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, 'বিএনপি বা কোনো বিরোধী দল যদি শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি পালন করে সে ক্ষেত্রে সরকার সবসময় সহযোগিতা করেছে এবং করবে। কিন্তু আমরা সবসময় দেখেছি তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলে সেখানে অশান্তি তৈরি করে এবং জনগণের সম্পত্তি বিনষ্ট করে।' 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, '১০ ডিসেম্বর ঘিরেও তারা দেশে অশান্তি তৈরি করেছিল। তারা গাড়িতে আগুন দিয়েছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে এবং জনগণের শান্তি নিরাপত্তা স্থিতি বিনষ্ট করেছে। ১১ তারিখেও আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবো, সতর্ক পাহারায় থাকবো আমাদের দল সতর্ক পাহারায় থাকবে যাতে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। যদি করার চেষ্টা করা হয় জনগণ প্রতিহত করবে, আমাদের দল জনগণের সাথে থাকবে।'


শেয়ার করুন