১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০১:৫০:৫২ পূর্বাহ্ন


সমাধানের জটিলতায় ঘুরপাক কাছে জাতীয় ঐকমত্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৫
সমাধানের জটিলতায় ঘুরপাক কাছে জাতীয় ঐকমত্য


দীর্ঘ সময়ের প্রলম্বিত আলোচনার পরেও জুলাই সনদ অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোন সর্বসম্মত সমাধানে আসতে পারেনি। জুলাই সনদের কতগুলো মৌলিক বিষয়ে অন্যতম প্রধান দল বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেছে। স্মরণে রাখতে হবে তথাকথিত ঐকমত্য আলোচনায় ক্ষমতা থেকে অপসারিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং সমমনা ১৪ দল অনুপস্থিত। এর বাইরেও রয়েছে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক বিহীন বিশাল জনগোষ্ঠী।

এমতাবস্থায় জুলাই সনদ তথা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গণভোটের অপরিহার্যতা উপেক্ষা করার অবকাশ নেই। জুলাই আগস্ট আন্দোলনের অধিকাংশ অংশীজন গণপরিষদ দাবি করে আসলেও অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু চলেছে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান সংবিধানের আওতায়। এমতাবস্থায় জুলাই সনদের অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যামন সংবিধানকে বাতিল করে দেবে। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম কীভাবে বৈধতা পাবে? অনেক আলোচনার পর বিএনপি সরকার ঘোষিত দিনে একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোটে সম্মত হয়েছে। জামাত, এনসিপিসহ অন্যরা চাইছে আগে গণভোট। ঐকমত্য কমিশন চাইছে ইতিমধ্যে সম্মত বিষয়সহ জুলাই সনদ বিষয়ে গণভোটের সম্মত দিনক্ষণ সমন্বিত করে ১৫ আগস্ট একটি দলিল স্বাক্ষর।

প্রতিবেদকের কাছে পরিষ্কার নয় একই দিনে কীভাবে গণভোটে এবং জাতীয় নির্বাচন হবে? সেটি করতে হলে নির্বাচন হবে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে আর যদি গণভোটে জুলাই সনদ অনুমোদিত হয় তাহলে সংবিধান সংশোধন বা বাতিলের প্রশ্ন এসে যাবে। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন এবং নির্বাচিত সংসদ আইনগতভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। সমাধান তাই এতো সহজ নয়। অপরদিকে গণভোট আগে হলে এবং জুলাই সনদ অনুমোদিত হলে- সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্থলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এমতাবস্থায় সংবিধান সংশোধন এবং অনুমোদন অধিকার শুধুমাত্র নির্বাচিত সংসদের উপর বর্তাবে। অনুমোদিত জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিছিয়ে যাবে।

একবছরের বেশি সময়ে অনির্বাচিত, স্বল্প অভিজ্ঞ সরকার দেশ পরিচালনায় তাল গোল পাকিয়ে ফেলেছে। অর্থনীতি ভঙ্গুর, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থির। বিনিয়োগ স্থগিত হওয়ায় বেকার সমস্যা প্রকট। এমতাবস্থায় ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এখন জটিল সমীকরণে বন্দি। সমাধানের সহজ পথ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আশা করি সবাই দেশের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিয়ে নির্বাচকেই প্রাধান্য দিবে। অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রভাব মুক্ত নির্বাচনে জনগণ শত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করুক। নির্বাচিত সংসদ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। তারও আগে সকল রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে সুস্পষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার করুক। তবে দেখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শ যেন দেশ পরিচালনার মূলমন্ত্র থাকে। জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ যেন পরাশক্তির ভূরাজনীতির ক্রীড়াঙ্গনে পরিণত না হয়।

শেয়ার করুন