১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০৪:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন


সেফ এক্সিট : নিরাপদ প্রস্থান
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৫
সেফ এক্সিট : নিরাপদ প্রস্থান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন


ভালো মন্দ সব মিলিয়ে দেশ পরিচালনায় ১৩ মাস চ্যালেঞ্জিং সময় পার করেছে শান্তিতে নোবেল ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশ শাসনের দায়িত্বে এসে সরকার কতটুকু সফল বা ব্যর্থ সেটির ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন হচ্ছে এবং হতে থাকবে। কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে দৃশ্যমান দেশে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা দানা বাধছে। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে নানা অজুহাতে প্রতিহিংসার কারণে কণ্ঠরোধ করে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সত্য মিথ্যা নানা অভিযোগ দিয়ে অসংক্ষ মামলায় জেল বন্দি আছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাল গোল পাকানো অবস্থায় তথাকথিত জাতীয় ঐক্য মত একই বৃত্তে ঘুরছে। এরই মাঝে দেশে এখন আলোচনার গরম টপিক নিরাপদ প্রস্থান-সেফ এক্সিট। 

জুলাই আগস্ট আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ সরকার পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রধান উপদেষ্টাদের নিয়ে বোমা পাঠিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন কিছু উপদেষ্টা দুর্নীতি করে আখের গুছিয়েছেন। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্বাচনের পরে নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ খুঁজছেন। আন্দোলনে সহযোগী এবং বর্তমানে এনসিপিতে সহকর্মী সারজিস আলম একধাপ এগিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন উপদেষ্টাদের মৃত্যু ছাড়া নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ নেই। এর পর থেকে দেশ-বিদেশে নানা মিডিয়ায় সেফ এক্সিট এখন বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ। উপদেষ্টারা কয়েকজন মিডিয়ায় নানাভাবে নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করছেন। অন্যতম উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বিষয়টি নাহিদ নিজে ব্যাখ্যা দেওয়া সংগত মনে করেছেন। রিজওয়ানা বলেছেন কোনো বিশেষ কারণে হয়তো ক্ষুব্ধ নাহিদ। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন নাহিদ যেন বিষয়টি সুর্দিষ্ট করেন। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে প্রস্থানের কথা ভাবছেন না।

এখানে উল্লেখ্য ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারের অংশীদার নাহিদ-সারজিসরা দীর্ঘসময় সরকারের নিরঙ্কুশ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে দেশব্যাপী দাপিয়ে বেরিয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, মব সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আছে। এমতাবস্থায় সরকার প্রধান ঘোষিত নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে তখন নিজেদের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার থেকে অশনি সংকেত মিলছে। এমনিতেই দেশে বিদেশে ইউনুস সরকার এখন বিতর্কিত। অনেকের মতে যেসব অভিযোগে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে সেগুলো অনেক কিছু বর্তমান সরকারের ওপর বর্তায়। 

সরকার দেশের মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক, বিরোধী মতবাদ গায়ের জোরে দমন করা হচ্ছে। যে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো করে বিগত সরকার প্রধান এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিচার করে শাস্তি দেয়া মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্য অর্জিত হয় নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা হলেও নির্বাচন কমিশন কোন পথ নকশা ঘোষণা করেনি। আওয়ামী লীগ এবং সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রণের বিষয়টি ঝুলে আছে।

আগস্ট ২০২৪-এর পর দেশে অনেক খুন, রাহাজানী, ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বিপুল পরিমাণে। এগুলোর দায় দায়িত্ব কাউকে না কাউকে নিতে হবে। তাই নিরাপদ প্রস্থানের প্রাণান্ত প্রয়াস করবে কিছু উপদেষ্টা এবং সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু ইতিহাস বলে নিয়তি কাউকে ক্ষমা করে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কিন্তু এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা অনেক কঠিন করে দিয়েছে। বিদেশে ইতিমধ্যেই সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যাক্তি হেনস্থা হয়েছে। এমতাবস্থায় বাগাড়ম্বর করা সরকারের কিছু মুখপাত্রের ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ জানেন। দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

শেয়ার করুন