১৮ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০৪:৩৮:৪৬ পূর্বাহ্ন


১৮৫ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজ নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৫
১৮৫ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজ নিয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলন


১৮৫ বছরের পুরোনো ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের’ খসড়া অধ্যাদেশ অংশীজন সবাইকে হতাশ করেছে। সংকীর্ণ স্বার্থে প্রণীত এই অবিবেচনাপ্রসূত খসড়া অধ্যাদেশ সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতো প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরও আহত ও ক্ষুব্ধ করেছে।

‘ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য উঠে আসে। ১২ অক্টোবর রোববার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেল অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হারুনুর রশিদ হারুন, সাবেক জিএস জাকির হোসেন, সাবেক জিএস এস এ এইচ এম জাভেদসহ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে মীর সরফত আলী বলেন, ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের ঐতিহ্য রক্ষায় দেশের সব রাজনৈতিক দল ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের সহযোগিতা কামনা করা হয়। ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য হস্তক্ষেপের বিষয়টি মেনে নেবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন প্রাক্তন ছাত্ররা। মীর সরফত আলী জানান, ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপরও যদি তারা এখান থেকে সরে না আসে, তাহলে প্রয়োজনবোধে সাত কলেজের সবাইকে নিয়ে একটি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তখন থেকেই সংকট ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত করার আগেই অধিভুক্তি বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তীব্যবস্থায় সাত কলেজের কার্যক্রম চলছে।

এতে সাত কলেজ নিয়ে এই প্রস্তাবিত কাঠামোর আপত্তি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের। তাঁরা ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। সরকারের কাছে ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের ১০ দফা দাবি জানিয়েছে চারদিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আগামী ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। এরপরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রাক্তন ছাত্ররা বলেন, ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে সরকার যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে, তার কাঠামো নিয়ে যা করা হচ্ছে তা যড়যন্ত্র ছাড়া কিছু না। তাঁরা বলেন, প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ‘হাইব্রিড কাঠামো’ বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষাকাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। যেকোনো মূল্যে দেশের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ১০ দফার মধ্যে রয়েছে যেকোনো মূল্যে দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র সংরক্ষণ করতে হবে। কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থে ও বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফেডারেল বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে। উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করা, যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সেশনজট মুক্ত করতে হবে। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষকসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভাগ প্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে। এ ছাড়া নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি, আবাসন- সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি ও শিক্ষাঋণ দিতে হবে। তাঁদের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থী প্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের আলোকে টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এবং ঐতিহ্যবাহী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হাইব্রিড বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষাকাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনো অবস্থায় সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।

শেয়ার করুন