৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:১৩:০৮ পূর্বাহ্ন


সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান জুলাই চেতনার পরিপন্থী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৫
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদান জুলাই চেতনার পরিপন্থী বক্তব্য রাখছেন বজলুর রশীদ ফিরোজ


চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা: বর্তমান বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আলোচনা করেন বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। আরও আলোচনা করেন চারণের সহ সভাপতি শাহজাহান কবির, কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, বিপুল কুমার দাস, জসিম উদ্দিন, প্রদীপ সরকার প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে পাকিস্তানের স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা সর্বোপরি স্বাধীনতা সংগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মীরা তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলন স্বাধীনতার পক্ষে মানসিক জমিন তৈরিতে অসামান্য অবদান রেখেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন তথা ছড়া, পথনাটক, কবিতা, গল্প বিশাল ভূমিকা রেখেছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তথা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও সাংস্কৃতিক কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। র‌্যাপসঙ্গীতসহ নানা দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে উজ্জীবিত করেছে। ২০২৪ এর ২৬ জুলাই চারণসহ প্রগতিশীল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সমানে প্রথম কারফিউ ভঙ্গ করা হয়। শুধু তাই নয়, ৩০ জুলাইসহ বিভিন্ন তারিখে গানের মিছিল, পদযাত্রার আয়োজন করে। পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে গান, কবিতা, নাটকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের জমিন প্রস্তুত করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার গণঅভ্যুত্থানের পরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গন। শিল্পকলাতে নাটক দেখানো বন্ধ করা, দেশের বিভিন্ন স্থানে লালন উৎসব বন্ধ করা, নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাঁধা প্রদান, নাট্য কর্মীদের উপর হামলা, মামলা করা হয়। শুধু তাই নয়, শাহজালাল মাজারসহ বিভিন্ন মাজারে বাউল গান বন্ধ করা হয়। অশ্লীলতার অজুহাত দিয়ে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশ্রয়ে মব সন্ত্রাস চলছে সর্বত্র। মুক্তমনা মানুষদের উপর আক্রমণ, বাংলা একাডেমিতে বই মেলার স্টল বন্ধ করে দেওয়া, শতাধিক মাজার ধ্বংস, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, ভিন্ন মতাবলম্বীদের বাড়ি-ঘরে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। এইসব ঘটনার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে কথিত তৌহিদী জনতার নামে অপরাধীরা দ্বিগুণ উৎসাহে মব সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব কর্মকাণ্ড জুলাই চেতনার পরিপন্থী। ফলে বৈষম্য মুক্ত সমাজের আকাঙ্খা নিয়ে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-শ্রমিক-জনতা, নারী-শিশুর আত্মদান আজ ভূলুণ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ হলেও ব্যবস্থার বদল হয়নি। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ভোগবাদী-মৌলবাদী সংস্কৃতি লালন করে। পুঁজিবাদী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা বহাল থাকলে ফ্যাসিবাদও থাকবে। ফলে পুঁজিবাদী বৈষম্যমূলক শোষণমূলক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মীদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে সংস্কৃতির উপর যেসব আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি ব্যবস্থা বদলের লড়াইকেও শানিত করা এখন সময়ের প্রয়োজন।

আলোচনাসভা শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা আবৃত্তি ও গণসংগীত পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন