দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশেষত ৫ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ঢাকা, খুলনা, বরিশালে যে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তার প্রামাণ্যচিত্র বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারপ্রধান থাকা অবস্থায় কেন প্রতিহত করতে পারলেন না, এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়তো তাকে মোকাবিলা করতে হবে। যদিও তিনি এ ধরনের কার্যকলাপ না করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু সেটা দেরিতে হয়ে গেছে।
নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর দেশে একনায়কত্ব স্থাপন করে অনেক অন্যায়-অনাচার, দুর্নীতি করেছে। যার পরিণতিতে জনতার আন্দোলনে সরকার পতন হয়েছে। বৈধ আদালতে স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাসহ অন্যায়কারীদের বিচার হোক সবাই চায়। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ৩২ নম্বর ভবন উন্মাদ জনতা সেনাবহিনীর উপস্থিতিতে মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দেবে-সেটি বিশ্বসমাজে কি প্রতিক্রিয়া ফেলবে? একই সঙ্গে রাজনৈতিক বহু নেতার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া এগুলো মোটেও ভালো কিছু নয়। অপরাধীর বিচার হওয়া দরকার এবং ভাংচুর করা সম্পদ অবৈধ অর্থে করলেও সেটা আদালতের মাধ্য সরকারের রাজস্ব কোষাগারে গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও এটা একটা ভুল সংকেত। তা-ও যদি ৫ আগস্টের সময় বা ৬-৭ আগস্টও হতো, সেটাও ওই সময়ের রাগ-ক্ষোভের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচ্য হতো। কিন্তু যে ঘটনা ঘটছে তা কিন্তু অন্তত ছয় মাস পর। যদিও এখানে নতুন ক্ষোভের সঞ্চার হওয়ার প্রেক্ষাপট রয়েছে। তবু খারাপ কিছুর মোকাবিলা খারাপ দিয়ে করা সমীচীন নয়।
এ ধরনের কার্যক্রম প্রতিহিংসা ছড়াবে, দেশ অনিবার্য সংঘাত, এমনকি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে। এমনিতেই দেশে হাজারো সমস্যা এখন সংকটে পরিণত। ফেব্রুয়ারি পেরোলে মার্চ থেকে শুরু হবে রোজার মাস। গরম বাড়তে থাকলে শুরু হবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট। সরকার কীভাবে লোডশেডিং সামাল দেবে, কীভাবে নিতপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখবে, সে চিন্তায় বিভোর। এরই মধ্যে কিছু অর্বাচীন মানুষের হঠকারিতায় সৃষ্ট ঘটনাগুলো দেশের পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে।
প্রতিবেশী দেশ কিন্তু এমনি অস্থিতিশীল বাংলাদেশের সুযোগ নিতে চাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম তারা দেশের এ গোলমেলে পরিস্থিতি দেখে ব্যথিত-উৎকণ্ঠিত। দেশপ্রেমিক মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ করছি। বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। অনেক সহায়তাকারী দেশ কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেবে। ক্ষণিকের উত্তেজনায় যারা ঔদ্ধত্যপনা করছে তারা, কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে। চিরদিন কিন্তু সবার সমান যায় না। ইতিহাস কিন্তু নিষ্ঠুর।
সেনাবাহিনীকেও বলবো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে। এমন অরাজকতা বাংলাদেশ দেখার জন্য কিন্তু ১৯৫২, ১৯৭১, ২০২৪ জনতা এ ধরনের অরাজক, প্রতিহিংসাপরায়ণ বাংলাদেশ দেখার জন্য আত্মাহুতি দেয়নি। এ ঘটনা কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে সারাবিশ্ব দেখেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা সত্য-মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্ব ভুল সংকেত পাচ্ছে।