৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩৮:৫২ পূর্বাহ্ন


দেশকে মেহজাবীন চৌধুরী
অবশ্যই ভাগ্য এবং দর্শকের আস্থার একটা ব্যাপার আছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৬-২০২৪
অবশ্যই ভাগ্য এবং দর্শকের আস্থার একটা ব্যাপার আছে মেহজাবীন চৌধুরী


মেহজাবীন চৌধুরী। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। প্রতিনিয়তই দর্শকপ্রিয় নাটক ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে লাক্স সুন্দরী নির্বাচিত হয়ে। সে হিসাবে অভিনয়ে ১৪ বছরের পথচলা তার। কিন্তু এবার ঈদে তাকে দেখা গেছে মাত্র একটি নাটকে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ আপনি। অথচ এবার ঈদে মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। কারণ কী?

মেহজাবীন চৌধুরী: সব সময় একই ফ্লোতে চলা যায় না। তাই কাজের সংখ্যা মাঝে মাঝে কমাতে হয়। এটা যেমন জরুরি, তেমন কঠিনও। আমি যখন ক্যারিয়ার শুরু করি, তখন অনেক শেখার প্রয়োজন ছিল, অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল। সে জন্য অনেক নির্মাতা-শিল্পীর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছি। প্রতিক্রিয়া যেমনই আসুক না কেন, প্রত্যেকটা কাজ থেকে আমি শিখেছি। ওই শিক্ষাটা নিয়েই আমার এত বছরের ক্যারিয়ার। আমাদের দেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে গিয়ে অভিনয় শেখা যাবে। তাই কাজের মাধ্যমেই শিখতে হয়। এই চেষ্টায় আমি নির্মাতাদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও সুযোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার। তাদের শেখানো পথেই আমি হেঁটেছি; তাই এখন বলতে পারি, গল্প পছন্দ হলেই কাজ করব, অন্যথায় না। আর এই স্যাক্রিফাইসটা অবশ্যই কঠিন। কারণ প্রত্যেক শিল্পী চান, বছরজুড়ে তার অনেক কাজ থাকবে, জনপ্রিয় হবে। কিন্তু এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার পর এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, পরবর্তী প্রতিটি কাজ আলাদা হোক। এ কারণেই এবার একটু বিরতি নেওয়া। 

প্রশ্ন: ঈদের একমাত্র নাটক ‘তিথিডোর’ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মেহজাবীন চৌধুরী: অনেক ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সাধারণত এ রকম ডার্ক টপিক নিয়ে কাজ করলে খুব একটা রেসপন্স পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ঈদের আমেজে মানুষ রোমান্টিক ও একটু কমেডি গল্প দেখতে পছন্দ করে। সেই জায়গায় এ রকম একটা ভারি কাজ, একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে। তার পরও মানুষ দেখছে, প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, ব্যাপারটা ভালো লাগছে।

প্রশ্ন: নাটকে অভিনয় প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন মনে হলো এই গল্পে কাজ করাটা প্রয়োজন?

মেহজাবীন চৌধুরী: আমি এমন কাজই করতে চাচ্ছি, যেটা দেখার পর কোনো না কোনোভাবে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় প্রভাব ফেলবে, তাদের ভাবতে বাধ্য করবে। আমাদের আশপাশে এই ধরনের অনেক মানুষ আছে। ডিপ্রেশনে ভুগছে; কিন্তু জানে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছে না। এই ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যার চিন্তা-ভাবনা অনেকের মাথায় ঘর বানায়। জীবনের একটা আলোকিত দিক আছে।

লড়াই করে সেই আলোতে আসা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রত্যেকটা মানুষের মনোবল আলাদা। অল্প বয়স থেকেই আমাদের ওপর পরিবার, সমাজ, আত্মীয়-স্বজনের নানা চাপ পড়ে। এই চাপ নিতে নিতে মানুষের বয়সের তুলনায় মানসিক বয়স দ্বিগুণ হয়ে যায়। মা-বাবারা ভাবতেই পারেন, বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে বলাটা সঠিক; কিন্তু কতটুকু বলা বা চাপ দেওয়া উচিত, সেটা বোঝা জরুরি। যখন পড়াশোনার পাশাপাশি বাচ্চাদের আনন্দে খেলাধুলা করার কথা, তখন অতিরিক্ত চাপের কারণে তারা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এই সব চাপ, ডিপ্রেশন মোকাবেলা করেও বাঁচা যায়, সেই বার্তা রয়েছে ‘তিথিডোর’-এ।

প্রশ্ন: অনেকে হতাশায় হয়তো আত্মহননের কথা ভাবছে। তাদের উদ্দেশে কোনো পরামর্শ দেবেন?

মেহজাবীন চৌধুরী: আমি তো পেশাদার কনসালট্যান্ট নই। আমি কোনো পরামর্শ দিলে সেটাই সঠিক-ব্যাপারটা তাও না। তবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমার মাধ্যমটাকে ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে যদি পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে সেটা অনেক বড় পাওয়া হবে। আমার হাতিয়ার তো অভিনয়। সেটার মাধ্যমেই চেষ্টা করেছি বার্তা দিতে। নিজেকে শেষ করে দেওয়া কখনো কোনো সমাধান হতে পারে না। মাঝেমধ্যে নিজের জন্য স্বার্থপর হতে হয়, আবার মাঝেমধ্যে পরিবারের কথা ভেবেও জীবনটা কাটাতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আমাদের আশপাশে অনেকেই বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনায় ডুবে আছে। কোনো না কোনো বিষয়ে লড়াই করছে। কারো আচরণে যদি অস্বাভাবিকতা দেখতে পান, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন, তার মনের খবরটা নিন। 

প্রশ্ন: নির্মাতা ও অভিনেত্রী জুটির সাফল্যের জন্য কী জরুরি?

মেহজাবীন চৌধুরী: যেকোনো কাজে পুরো টিমের লক্ষ্য যদি এক হয়, তাহলেই সেটা সফল হয়। আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, নির্মাতা হিসেবে ভিকি ভাইয়াও সে ধরনের গল্প তুলে ধরতে চান। এ কারণে হয়তো আমাদের কাজ দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এখানে অবশ্যই ভাগ্য এবং দর্শকের আস্থার একটা ব্যাপার আছে। আর শুধু নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীই নয়, টিমের অন্য কুশলীদেরও একই লক্ষ্য থাকতে হয়। তাহলেই কাজটা কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে।

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী দীপা মল্লিক আপনার প্রশংসা করেছেন। বিষয়টা নিয়ে কিছু বলবেন?

মেহজাবীন চৌধুরী: ভিডিওটা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। ভাবিনি, তাঁরা আমাদের কাজ এত মনোযোগ দিয়ে দেখেন, পছন্দ করেন, নাম পর্যন্ত মনে রাখেন। এটা সত্যিই অনেক বড় পাওয়া। এত সিনিয়র, গুণী মানুষ আমাকে এ রকম বার্তা দিয়েছেন। এটা আমার কাছে আশীর্বাদ।

প্রশ্ন: এই সময়ের অভিনেত্রীদের কেউ কেউ আপনাকে আইডল মানেন। বিষয়টা কেমন লাগে?

মেহজাবীন চৌধুরী: আমার মনে হয় না, আইডল মানার মতো কোনো জায়গায় পৌঁছেছি। তবে আমার ক্যারিয়ারটা যদি কেউ দেখে, তাহলে একটু হলেও ভাববে। কারণ আমি অনেক ধরনের গল্পে কাজ করেছি। চাইব, যারা কাজ করছে, তারা ইন্ডাস্ট্রিকে যেন নিজের পরিবার মনে করে দায়িত্ব নিয়ে ভালো কিছু উপহার দেয়।

প্রশ্ন: এখনকার নাটকের নাম, সংলাপ নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা হয়। এটা নিয়ে আপনার পর্যালোচনা জানতে চাই।

মেহজাবীন চৌধুরী: এখানে দর্শকের অনেক বড় দায়ভার আছে। দর্শক যখন ভালো গল্প দেখবে, তখন যেগুলো মানসম্পন্ন কাজ না, সেগুলো এমনিতেই পিছিয়ে যাবে। ধরুন একটা কনটেন্ট, যেটার নাম খুব আকর্ষণীয় (খারাপ সেন্সেই হয়তো বলছি), সেই নাম দেখার পরও আপনি কেন ক্লিক করবেন? এটা কি আপনার রুচিবোধের সঙ্গে যায়? দর্শক হিসেবে কোন কাজটি দেখব, কোনটা নিয়ে কথা বলব, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করব, সেটা নিজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন: কিন্তু দর্শকের সামনে মানসম্পন্ন কাজ নিয়ে আসার দায়টা শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের নয় কি?

মেহজাবীন চৌধুরী: হ্যাঁ, দায়টা উভয় পক্ষের ওপরেই পড়ে। আমি কী বানাচ্ছি, কী দেখাচ্ছি, সেটার পেছনের তাৎপর্য কী, সেটা বোঝা যেমন দরকার; তেমনি যিনি দেখছেন, কেন দেখছেন, তারও ভাবা উচিত। আমি মনে করি, যার মধ্যে একটা ভালো গল্প বলার আত্মবিশ্বাস আছে, সে সব সময় এগিয়ে থাকবে। অনেক ট্রেন্ডি জিনিস আসে, সেগুলো আসলে ক্ষণস্থায়ী।

প্রশ্ন: দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কবে মুক্তি পাবে? নতুন কোনো ছবিতে কি যুক্ত হয়েছেন?

মেহজাবীন চৌধুরী: নতুন ছবির কথা চলছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। যে দুটি ছবির (সাবা ও প্রিয় মালতী) কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে শিগগিরই ঘোষণা আসবে। অবশ্যই এই বছরের মধ্যে সুখবর আসবে।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। আমি চাই এর উত্তরটা মনের ভেতর থেকে দিন। সব কাজ শেষে ঘরে ফিরে একান্ত নিজের কাছে মেহজাবীন আসলে কেমন?

মেহজাবীন চৌধুরী: খুবই কঠিন একটা প্রশ্ন। নিজেকে নিজে বর্ণনা করা সবচেয়ে কঠিন। আমার কাছের বা পরিবারের মানুষকে এই প্রশ্ন করলে হয়তো উত্তর দিতে পারবেন। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি আরো পরিশ্রম করতে চাই। অভিনয়ের মাধ্যমে যেন নিজের দেশকে তুলে ধরতে পারি, সেই ইচ্ছাটা আছে। আর দিনশেষে আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। চাহিদার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছি। জীবন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

শেয়ার করুন