যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ সমাবেশে অংশগ্রহণের পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আয়োজিত এক মতবিনিময় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানে আরো যারা পালিয়ে গেছেন তাদের সবাইকে নিয়ে প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন। এ চক্রান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশে কীভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়, অস্থিতিশীলতা তৈরি করে দীর্ঘ আন্দোলনের সফলতা, বিজয়কে নস্যাৎ করা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তার মূল টার্গেট হচ্ছে বর্তমান সরকারকে বা জুলাই আন্দোলনের ফসলকে ব্যর্থ এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করে অন্য কাউকে ক্ষমতায় আনা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কদিন আগে তিনি (শেখ হাসিনা) দিল্লি থেকে টেলিফোনে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জুলাই-আগস্টের বিপ্লব সম্পর্কে এবং যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন এবং এই আন্দোলনকেও অপমান করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই যারা আন্দোলন করেছে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় তারা আক্রমণ করেছে। ৩২ নম্বরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অরাজক পরিস্থিতিকে সমর্থন করি না। আমরা স্টেটমেন্টে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি। এখন যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে বলে আমরা মনে করছি। বর্তমানের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের অভিপ্রায়ে অতিদ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা দরকার। সেই সঙ্গে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার গঠন করা প্রয়োজন। এটা হলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিচিতি পাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে। ইলিয়াস আলীসহ ৫০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে যখন গুম করা হয়, তখন তার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। এখন তার বিয়ে হয়েছে এবং বাবা ফেরার অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপি অনড় ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে। মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ এমনকি সেনাবাহিনীতেও দলীয়করণের ঘটনা ঘটেছে স্বৈরাচারের ১৫ বছরে। যদি জানতে পারতো যে, প্রার্থীর চৌদ্দগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ বিএনপি করেছে, তবে তার চাকরি হতো না, মেধাবী অথবা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও পদোন্নতি পেতেন না। বিএনপির জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন জেলাগুলোর নাগরিকরাও চাকরি পায়নি গত ১৫ বছরে। এতদসত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠ ছাড়েননি, তারা লড়াই করেছেন। এজন্য শহিদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী এবং বেগম জিয়ার লড়াকু সৈনিকদের আবারও ধন্যবাদ জানাতে চাই, গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই প্রবাসের নেতাকর্মীদেরও।
ওয়াশিংটন ডিসি বিএনপির উদ্যোগে আলেক্সান্দ্রিয়াস্থ রয়েল প্যালেস কাবাব পার্টি হলে এ মতবিনিময় সমাবেশ ৭ ফেব্রুয়ারি হাফিজ খান সোহায়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন ডিসি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ভার্জিনিয়া স্টেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ এবং মেরিল্যান্ড স্টেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কাজল। মঞ্চে উপবেশন করেন এ তিন স্টেট বিএনপির সভাপতিরা। তারা হলেন-মেরিল্যান্ড বিএনপির সভাপতি শহিদুর রহমান খান চৌধুরী এবং ভার্জিনিয়া বিএনপির সভাপতি জহির খান। ভার্জিনিয়া স্টেটের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাকির আলম জসিম কর্তৃক পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।