৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:০৩:৩৫ অপরাহ্ন


নারী অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারে গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৫-২০২৫
নারী অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারে গণসংহতি আন্দোলনের নিন্দা


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি যেভাবে নারীদের প্রতি অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করে আক্রমণ করা হচ্ছে, আমরা তার নিন্দা জানাই।

গত ৬ মে মঙ্গলবার দেয়া ওই বিবৃতিতে তারা জানায়, সংঘবদ্ধভাবে অন্যায্য দাবি জানালেই কেবল সংখ্যার জোরে দাবির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। ‘মব’ সৃষ্টির মানসিকতা সবসময়ই অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পদ্ধতি। আমরা যেকোনো নাগরিকের প্রতি যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ শারীরিক, মানসিক ও ভাষাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

দেশের নাগরিক হিসেবে আইন, মর্যাদা ও স্বীকৃতির ভিত্তিতে যে রাষ্ট্রীয় অধিকার একজন নারীর প্রাপ্য, তা এখনও বাংলাদেশে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এই প্রাপ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। বহু যুগ ধরে নারীর প্রতি গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার যে বৈষম্য, সেটা কমাতে এই রিপোর্ট একটি জরুরি পদক্ষেপ।

অন্যান্য কমিশনের মতোই, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশই যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি বেশকিছু সুপারিশের ক্ষেত্রে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে, দ্বিমত এসেছে। দ্বিমত ও বিতর্কের জায়গা থাকাটাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনার মাধ্যমেই সকল অংশীদারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই অন্যান্য কমিশন যেমন বাতিলের প্রশ্ন আসছে না, তেমনি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকেও বাতিলের প্রসঙ্গ না এনে বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একে সকলের জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক করে তোলার ক্ষেত্রে মনযোগ দেওয়া উচিৎ।

দেশে বহু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে এই মুহূর্তে অসংখ্য নারী কর্মরত রয়েছেন। তাদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং কর্মজীবন ও অবসরকালীন জীবনের কোনো নিশ্চয়তার বিধান আজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। একই কথা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত পুরুষদের ক্ষেত্রেও খাটে, তবে সামাজিক ও আইনী সুরক্ষাবলয়ের বিবেচনায় নারীই সবক্ষেত্রে অধিকতর অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে।

ব্যক্তিগত, পেশাগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক সব দৃষ্টিকোণ থেকেই নারীর জীবনকে মর্যাদাপূর্ণ, মানবিক, ও নিরাপদ করার জন্য নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে, আমরা সেগুলোকে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানাই। পাশাপাশি, সুপারিশগুলো নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা এবং আরও যেসব প্রস্তাবনা এতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, সে বিষয়েও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

একইসাথে বলি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বিভাজনের রাজনীতিকে পেছনে ফেলে আসার সুযোগ পেয়েছি। বহুবার বহুভাবে এদেশের মানুষকে বিভাজিত করে পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে- যার পরিণতি হলো ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন। আমরা কোনোভাবেই এই ধরনের বিভাজনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। যারা সংঘবদ্ধভাবে নারীর প্রতি সহিংস ভাষা প্রয়োগ করছেন, তাদেরকে আমরা আহবান জানাই, নতুন করে দেশের মানুষকে বিভাজিত না করে বরং গঠনমূলক আলোচনার পথ তৈরি করুন। নারীর প্রতি সহিংস ভাষা ও মনোভাব কখনোই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে না।

আমরা সরকারের প্রতি আহবান জানাই, দেশের নাগরিক হিসেবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যের শিকার হিসেবে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য আপনারা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখুন। সেইসাথে সংস্কারের সকল সিদ্ধান্ত যাতে প্রতিনিধিত্বমূলক হয় এবং দেশের সকল মানুষ যাতে এই সংস্কারের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যও আমরা সরকারের প্রতি আহবান জানাই।

শেয়ার করুন