হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান ও সরকারি চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই দাবি শুধুমাত্র অবৈধ নয়, বরং তা একটি স্বাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মৌলিক অধিকার এবং নীতির ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম. গারবার ১৪ এপ্রিল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, হার্ভার্ড তার স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে না এবং সাংবিধানিক অধিকার থেকে একচুলও সরবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী পড়াবে, কাকে নিয়োগ দেবে, কিংবা কোন বিষয়ে গবেষণা করবে-এ সিদ্ধান্ত কোনো সরকারের হাতে থাকা উচিত নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের পাঠানো চিঠিতে হার্ভার্ডকে গবেষণা অনুদান চালু রাখতে হলে একাধিক শর্ত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে-একাডেমিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের মতাদর্শ যাচাই, প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন, মুখোশ পরা নিষিদ্ধকরণ এবং নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কার আনা।
হার্ভার্ডের অনড় অবস্থানের জবাবে ১৪ এপ্রিল সোমবার রাতে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। প্রশাসনের অভিযোগ, গাজা যুদ্ধ ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড, যা ১৯৬৪ সালের সিভিল রাইটস অ্যাক্টের লঙ্ঘন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা বিগত ১৫ মাসে অ্যান্টিসেমিটিজম প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে জাতিভিত্তিক ভর্তি নীতির সংস্কারও করেছে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ডিন জর্জ কিউ. ডেলি বলেন, গবেষণাভিত্তিক অংশীদারিত্বে গত সাত দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বহু জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা উদ্ভাবিত হয়েছে, যা এখন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে হুমকির মুখে। হার্ভার্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামার্স বলেন, আইন লঙ্ঘন করে চাপ প্রয়োগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত তা প্রত্যাখ্যান করা, এবং শেষ সিদ্ধান্ত আদালতেই হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৬.৯ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদানে প্রায় ৯৪.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ৪ লাখ ৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট গারবার বলেন, চিন্তা ও অনুসন্ধানের স্বাধীনতা রক্ষা করা মুক্ত সমাজের জন্য অপরিহার্য। শুধু হার্ভার্ড নয়, প্রশাসনের চাপের মুখে রয়েছে কলাম্বিয়া, মিশিগান ও নর্থওয়েস্টার্নসহ ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হস্তক্ষেপ উচ্চশিক্ষা ও উদ্ভাবন উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।