৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২৬:৫৬ অপরাহ্ন


দেশকে জাকিয়া বারী মম
বন্ধুত্ব আমার কাছে খোলা বইয়ের মতো
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৪
বন্ধুত্ব আমার কাছে খোলা বইয়ের মতো জাকিয়া বারী মম


জাকিয়া বারী মম। ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে পা রেখেছেন। ২০২৪ এর শেষ দিকে এসেও তার ব্যস্ততা আগের মতোই। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে একই রকম ব্যস্ততা কিভাবে ধরে রেখেছেন?

মম: কাজকে ভালোবাসি বলেই মনে হয় এতোদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সব সময় কাজটাকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে শেষ করার চেষ্টা করি। এটা মনে হয় আমাকে যারা কাজে নেন তাদের ভালো লেগেছে। যে কারণে নিয়মিত কাজের সুযোগ পাচ্ছি। 

প্রশ্ন: আপনি তো সম্প্রতি চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য হয়েছেন। কাজ শুরু করেছেন?

মম: হ্যাঁ, আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। আমি শুটিংয়ের কাজে ঢাকার বাইরে থাকায়, প্রথম মিটিংটি অনলাইনে করেছি। এই কমিটির আমি কনিষ্ঠতম সদস্য। সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের মানুষের টাকায় যে সিনেমা নির্মিত হবে, সেটি যেন ভালো কিছু হয়। এই দায়িত্বের মাধ্যমে আমি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন এবং মেধাবী নির্মাতাদের পাশে থাকতে চাই।

প্রশ্ন: এখন কি পুরোদমে কাজ করছেন?

মম: হ্যাঁ, বলা যায় পুরোদমে কাজ করছি। বর্তমানে আমি দীপ্ত টিভির জন্য একটি কাজ করছি। এই নাটকের নাম ‘এগিয়ে যাও আত্মবিশ্বাসে’। রুবায়েত মাহমুদ পরিচালিত এই নাটকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীর আত্মবিশ্বাসের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি ‘রিমান্ড’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ শুরু করেছি, যা রাজনীতি ঘিরে।

প্রশ্ন: অভিনয়ের কি অবস্থা এখন? সর্বশেষ কোন নাটকে কাজ করেছেন?

মম: সম্প্রতি ‘টু বি অর নট টু বি’ নাটকের শুটিং শেষ করেছি। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। নাটকটির বিষয়বস্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। এটি একজন শিক্ষার্থীর ধর্ষণের পরবর্তী মানসিক অবস্থা এবং তার জীবনের ওপর এর প্রভাব নিয়ে। কাজটি করতে গিয়ে আমার কাছে সেই ঘটনাটা আবার চোখের সামনে চলে আসে, যা সত্যিই কষ্টদায়ক ছিল। এই ধরনের চরিত্রে কাজ করা সত্যিই কঠিন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতে হয়। কাজটি করার সময় আমার মানসিক অবস্থা অনেক সময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা আমার পেশার অংশ।

প্রশ্ন: প্রতিদিন নতুন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ক্লান্তি অনুভব করেন?

মম: প্রতিদিন নতুন চরিত্রে অভিনয় করা মানে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। কখনো ক্লান্তি আসে, তবে সেটা যেন নতুন করে ফিরে যায়। অভিনয়ের মধ্যে আমি আমার অস্তিত্ব অনুভব করি। ক্যামেরার সামনে আমি নিজেকে আবিষ্কার করি, আর চরিত্রের প্রতি মনোযোগ দিলে ক্লান্তি হারিয়ে যায়। তবে ইন্ডাস্ট্রির আরো ভালো সাপোর্ট পেলে, এটি আরো সহজ হতে পারত। কখনোই আমি লজিস্টিক সাপোর্টটা ঠিকমতো পাই না, যা প্রতিদিনের কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

প্রশ্ন: কখনো কোনো চরিত্রে এতটাই হারিয়ে গেছেন যে সেটা আপনার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে?

মম: এটা প্রায়শই হয়। যখন আমি কোনো চরিত্রের মধ্যে হারিয়ে যাই, তখন সে চরিত্রটি আমাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। চরিত্রের উদ্দেশ্য এবং যুক্তি যদি আমার মধ্যে প্রবাহিত না হয়, তাহলে আমি ভালোভাবে তা ফুটিয়ে তুলতে পারি না। এমনকি, কিছু চরিত্র এমনভাবে আমার ওপর ভর করে থাকে যে, তা অনেকদিন আমার মধ্যে থেকে যায়।

প্রশ্ন: আপনি কি নিজের কাজ দেখেন? কীভাবে আপনার কাজের মূল্যায়ণ করেন?

মম: হ্যাঁ, নিজের কাজ অবশ্যই দেখি। নিজের কাজ থেকে ভুল শিখতে হলে সেটি দেখতে হয়। তবে প্রায় সময় আমার নিজের কাজগুলো ভালো লাগে না। আমি খুঁজি কোথায় ভুল হয়েছে, কোথায় উন্নতি করা যেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় প্রোডাকশন হাউসের সাথে একমত হতে হয়, যেটা অনেকটা স্ববিরোধী হয়ে যায়। তবে, আমি মনে করি এই স্বীকৃতির জন্যই আমরা কাজ করে যাই।

প্রশ্ন: চলচ্চিত্র নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

মম: চলচ্চিত্রে আমি কি যোগ্য, তা নিয়ে আমি কখনো চিন্তা করি না। তবে, আমাদের চলচ্চিত্রের ভাষা এবং সেই ভাষার প্রতি যে এক ধরনের সম্মান থাকা উচিত, আমি সে বিষয়ে কথা বলার পক্ষে। দারুচিনি দ্বীপ পর দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি, কিন্তু কীভাবে কাজ করেছি, সেটা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। বর্তমানে আমি চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে খুব বেশি কিছু ভাবছি না, তবে ভবিষ্যতে দেখা যাক।

প্রশ্ন: প্রেম এবং বন্ধুত্বের সংজ্ঞা আপনার কাছে কী?

মম: প্রেম আমার কাছে একটি অনুভূতি, যা কখনো মানব-মানবীর মধ্যে, আবার কখনো অন্য কোনো বস্তুর প্রতি হতে পারে। এটি কখনো জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। বন্ধুত্ব আমার কাছে খোলা বইয়ের মতো, যেখানে কখনো ইচ্ছে হলে পড়তে পারি। বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি হচ্ছে আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, এবং একে অপরের প্রতি ভালোলাগা।

প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

মম: আমি কখনোই ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করি না। আমার মতে, বর্তমানটিই গুরুত্বপূর্ণ। যদি বর্তমানে আমি আমার কাজ ভালোভাবে করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতও ভালো হবে। জীবন যেভাবে চলতে থাকে, তেমনটাই আমার পছন্দ।

শেয়ার করুন