বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে করা এক মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তাঁর জামিন পাওয়া উচিত ছিল।’
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করব বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাঁকে জামিন দিয়ে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের একজন সাংবাদিকের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করবেন।’ বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মাহদুদুর রহমান দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। গণতন্ত্র, বহুমতের সহাবস্থান ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধার নীতিতে বিশ্বাসী মানুষ। আওয়ামী কর্তৃত্ববাদের আগ্রাসী আক্রমণের মুখেও তাঁর মাথা নোয়ানো যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘মাহমুদুর রহমান পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শারীরিকভাবে তাঁকে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের হিংস্র আক্রমণে তাঁকে দমাতে না পেরে তাঁর জীবনকে বিপন্ন করার চক্রান্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ও ক্ষুরধার লেখনীর জন্যই শেখ হাসিনা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বহু মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরসহ ফরমায়েশি সাজা দিয়ে অকথ্য জুলুম নিপীড়ন চালিয়েছে। তবু তিনি আওয়ামী সরকারের রক্তচক্ষুর ভয়ে ভীত না হয়ে নিজ নীতি ও আদর্শে অটল থেকেছেন।’
উল্লেখ্য, গুরুতর অসুস্থ মাকে দেখতে মাহমুদুর রহমান কদিন আগে দেশে পৌঁছায়। এ সময় বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানা ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটে। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। ধারণা করা হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে যেভাবে মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যহার করা হচ্ছিল সে ধারা অনুসারে মাহমুদুর রহমানকে ছাড় দেয়া হবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়। মাহমুদুর রহমান শুধু শেখ হাসিনা সরকারই নয়, একই সঙ্গে প্রচণ্ড সমালোচক ছিলেন বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেরও।
এদিকে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন তার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার। ইতিমধ্যে ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সংগঠন ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামও দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে সংগঠনটি। মানববন্ধন থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিজে উদ্যোগ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির ব্যবস্থা না করলে তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
এর মধ্যে আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, আজ সারাদেশের মানুষের মধ্যে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঘৃণার জন্ম দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। আমার দেশ পত্রিকায় একবার আমরা আদালতের বিষয় নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলাম। সেজন্য আদালতের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেসময় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামসহ সিনিয়র আইনজীবীরা তাকে (মাহমুদুর রহমানকে) ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমরা কোনো অসত্য রিপোর্ট করিনি। সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনিই সবার প্রথমে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী বলতে সাহস করেছিলেন, আর আজ তাকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।