৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে জাকিয়া বারী মম
রাজনীতিতে শিল্পী অন্ধ হলে পথ দেখাবেন কে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৮-২০২৪
রাজনীতিতে শিল্পী অন্ধ হলে পথ দেখাবেন কে জাকিয়া বারী মম


জাকিয়া বারী মম। দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন। কয়েক বছর আগে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। এবার তিনি আলোচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে। এ বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: কয়েক বছর আগে রাস্তার যানজট নিয়ে আপনার একটি মন্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। ওই বিষয়টা আপনার মনে আছে?

জাকিয়া বারী মম: মনে না থাকার কি আছে। আমরা যারা ঢাকা শহরের রাস্তায় চলাফেরা করি প্রতিদিনই যানজটে বসে সময় নষ্ট করি। অথচ দেশে তখন নানা রকম অবকাঠামো নিয়ে প্রসংশা করে খবর প্রচার হতো। উত্তরা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রাানজিট (বিআরটি) প্রকল্প নিয়ে কত স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। অথচ বাস্তবায়নের বেলার আমরা দেখলাম কিছু টাকা চুরির মহৎসব হয়েছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের সময়ের কোনো মূল্য সরকারের কাছে আছে বলে মনে হয়নি। এই দুঃখ থেকেই তখন ফেসবুকে লিখেছিলাম, এতো অবকাঠামো করে কি হবে, মানুষের যদি ভোগান্তি না কমে। 

প্রশ্ন: এবারের আন্দোলনে কি ওই সূত্র ধরেই যুক্ত হয়েছিলেন?

জাকিয়া বারী মম: একটা ক্ষোভ থেকে বলতে পারেন। আর পূর্বের বিষয়টি তো ছিলই। আমার ছেলে উদ্ভাস ক্লাস সিক্সে পড়ে এখন। শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করে উদ্ভাস এসে আমাকে বলে ‘আমিও ছাত্র’। আমিও আন্দোলনে যাবো। আমার মনে হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের ছোট-বড় সবাইকে একত্র করেছে। একটা পর্যায়ে ছাত্র-জনতা মিলে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। দেশের অবস্থা কোন দিকে যাবে, তা এত তাড়াতাড়ি বলা যাবে না। কী হবে, দেখি। বড় একটা ঘটনা ঘটাল ছাত্ররা। এখন বড়রা মিলে কী করেন, দেখতে হবে তো।’ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পাওয়া যাবে, পাচার হওয়া সব টাকা দেশে ফিরবে, ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমবে-এমনটাই এখন চাওয়া। 

প্রশ্ন: রাজনীতিতে শিল্পীদের সরাসরি সম্পৃক্ততা চোখে পড়ার মতো। অনেকে আবার রাজনৈতিকভাবে সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছেন। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন? 

জাকিয়া বারী মম: সক্রিয় রাজনীতি শিল্পীদের কাজ নয়। শিল্পী তার শিল্পকর্মের কাজটা ঠিকমতো করবেন। এটাও ঠিক, মানুষ যখন কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করেন, তিনি নিরপেক্ষও হতে পারেন না। কোনো না কোনো পক্ষের প্রতি তার সমর্থন থাকে। এটা স্বাভাবিক; কিন্তু সেটা যেন অন্ধের মতো না হয়। রাজনীতির কারণে শিল্পী অন্ধ হলে পথ দেখাবেন কে? ন্যায়কে ন্যায় আর অন্যায়কে অন্যায় বলার শক্তি থাকতে হবে। সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতির কারণে এটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।

প্রশ্ন: আন্দোলনের পর কি স্বাভাবিক কাজে ফিরতে পেরেছেন?

জাকিয়া বারী মম: এখনও ফেরা হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে শুটিং শুরু করবো। তবে শোবিজ অঙ্গনে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। কারণ অভিনয় অঙ্গনে কাজ করতে গিয়ে অনেকের কাছে সম্মানী বকেয়া থাকে। কেউ তো আবার এমন ভাব করেন, “সুযোগ দিয়েছি আবার টাকাও দিতে হবে!” চুপ থাকার কারণে এমনটা হয়েছে। তবে আমি অনেক বছর ধরে আমার সেক্টরের এসব নিয়ে কথা বলে আসছি। এখন সবাইকে বলতে হবে।

প্রশ্ন: আন্দোলনে যা দেখলেন, তা নিয়ে কি কোনো কাজ হবে? 

জাকিয়া বারী মম: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরুর আগেই ‘মাস্টার’ নামে নতুন একটি ছবির কাজ শুরু করেছি। পরিচালনা করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। সামাজিক পটভূমিতে রাজনৈতিক যে দৃশ্যপট তৈরি হয়, সেটাই নিয়েই সিনেমা। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে আমার মনটা একটু বিক্ষিপ্ত ছিল। এর মধ্যে ‘হারাজা’ও ‘লভিস’-দুটি সিনেমা দেখেছি। মনকে অন্যদিকে নেওয়ার জন্য ছবি দেখার চেষ্টা করেছি; কিন্তু হয়নি। “মহারাজা”-র একটা সিনেমার রিভিউ শুনে আমিও দেখার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আমার কাছে সিনেমাটা ভালো লাগেনি। এত নৃশংসতা আমার ভালো লাগে না। এলভিস প্রিসলিকে নিয়ে ছবিটা দেখে মনটা ভরে গেছে। খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি।’

শেয়ার করুন