৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৪:১৪ অপরাহ্ন


তারেক রহমান ফিরছেন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৮-২০২৪
তারেক রহমান ফিরছেন তারেক রহমান


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আপনি আজকের মধ্যে- চব্বিশ ঘণ্টা প্রায় হয়ে যাচ্ছে, ২টার মধ্যে দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কখন দেশে আসবেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি (তারেক রহমান) চাইলেই দেশে ফিরে আসতে পারেন। যার অর্থ যে কোনো মুহূর্তে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। তবে বিকেলে বিএনপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় আজ (৭ আগস্ট) বুধবার নয়া পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে এক সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কখন দেশে পৌঁছবেন সেটা জানা না গেলেও বিকেল ২টার সমাবেশে বক্তব্য দেবেন এর অর্থ বুধবার সকাল নাগাদ তিনি ঢাকায় পৌঁছবেন লন্ডন থেকে। 

কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেনে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেবো। এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট, উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেয়ার জন্য। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেবো। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া উচিত যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনারা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থির করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।

‘গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতার জন্যে আপনারা কাজ করেছেন। দুঃখপ্রকাশ করছি এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী তারা কয়েকটি টিভি সেন্টারে অগ্নি সংযোগ করেছে, ভাংচুর করেছে। এটা মুক্ত স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যম তার বিরুদ্ধে। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।”

‘শিক্ষার্থীদের স্যালুট’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই যে সমস্ত শহীদদের যারা ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদ জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের আমাদের সন্তানদের যারা তাদের মেধা বৃদ্ধিমত্তা সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকে রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় অর্জন করেছেন আমরা তাদের স্যুালেট জানাই। আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সকল ব্যক্তি, পেশাজীবী যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আছেন তাদের সকলকে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই বিজয় অর্জন করার জন্য।

তিনি বলেন, এই বিজয় অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের-এ স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। সেই স্বাধীনতা তখনই সুসংহত হবে যখন আমরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারব। আর সেজন্য আজকে প্রয়োজন ধরয্য, সংযম এবং পরমতসহিষ্ণুতার জন্য নিজেকে তৈরি করা।

‘বিএনপির বার্তা’

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই, যে এখন এরোগেন্টস, রেজিয়েন্স এটার কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের। এখন যেটা প্রয়োজন ধর্য্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন। যারা এটা করছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়, তারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে। এ বিষয়গুলো সবার মনে রাখতে হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সারা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আমার দলের নেতা-কর্মীদেরকে অনুরোধ করব, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে একটা ঠান্ডা অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা করতে হবে।

‘আমরা রাহুমুক্ত হয়েছি’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রাহুমুক্ত হয়েছি, আমরা ফ্যাসিবাদের যে মূল হোতা জনগণ তাকে সরিয়েছে, সে পালিয়েছে, তাকে বিতাড়িত করেছে। সেখানে এই বিজয় নিসন্দেহে বড় বিজয় সেই বিজয়টাকে কনসোলেটেড করতে হবে।

‘শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা নেই’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন বলেন, নিরপেক্ষ সরকার বলেন তা গঠন করা হবে তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।

‘বেগম জিয়ার বার্তা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম সবাইকে প্রথম যে বলেছেন, সবাই শান্ত হতে বলো। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ। জনগনকে সর্তক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি ৫ আগস্ট রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন। অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন।

‘তারেক রহমান কবে ফিরবেন’

মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক, আমরা অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ। সংবাদ সম্মেলন গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আন্দোলনে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণের অঙ্গীকার করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দোতলায় একটি কক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে এই বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন। বৈঠকে স্বশরীরে মহাসচিবসহ পাঁচজন সদস্য্ ছিলেন। বিদেশে অবস্থান করা আবদুল মঈন খান, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

শেয়ার করুন