১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১৮:১৫ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্প প্রশাসনের বরখাস্ত বিচারকরা আইনি লড়াইয়ে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের বরখাস্ত বিচারকরা আইনি লড়াইয়ে বরখাস্ত বিচারক জেনিফার পেইটন


যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন কোর্টে কাজ করা একাধিক বিচারক দাবি করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বরখাস্ত হওয়া অনেক বিচারক আইনি লড়াই শুরু করেছেন এবং জনসম্মুখে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। বিচারকদের জন্য খুব একটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরখাস্ত হওয়া বিচারকদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫০ ছাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নবনিযুক্ত বিচারকও।

সাবেক সহকারী প্রধান ইমিগ্রেশন বিচারক জেনিফার পেইটন, যিনি ২০১৬ সালে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তিনি বলেন, আমি আমার কাজকে ভালোবাসতাম এবং তাতে দক্ষও ছিলাম। অথচ বরখাস্তের চিঠিতে মাত্র তিনটি লাইন লেখা ছিল, কোনো কারণ জানানো হয়নি। বিচারক পেইটন এখন মেরিট সিস্টেমস প্রোটেকশন বোর্ডের মাধ্যমে আপিল করছেন, যদিও এই স্বাধীন সংস্থাটিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনার শিকার।

বিচারক পেইটনের ধারণা, একটি ডানপন্থী সংস্থার তৈরি করা বিরোধী ডেমোক্র্যাট তালিকায় তার নাম থাকার কারণেই তিনি বরখাস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তার আদালত সফর করানো সিনেটর ডিক ডারবিনের উপস্থিতি তাকে টার্গেটে পরিণত করলো। ডারবিন নিজেও এই বরখাস্তকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন। শিকাগোর বিচারক কার্লা এসপিনোজা, যিনি ২০২৩ সাল থেকে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সম্প্রতি একটি রায় প্রদানকালীন অবস্থায় তিনি বরখাস্ত হন। তাকে জানানো হয়, দুই বছরের প্রবেশন মেয়াদ শেষে তাকে আর রাখা হবে না। তিনি জানান, আমি পেশাগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমি কোনো রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত নই। আমি ব্যাখ্যার অধিকার রাখি।

বিচারক এসপিনোজা বলেন, বরখাস্ত হওয়া বিচারকদের মধ্যে নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংখ্যা বেশি, বিশেষ করে যাদের নাম থেকে জাতিগত পরিচয় প্রকাশ পায়। তিনি মনে করেন, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের চিত্র এবং তিনি একুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি কমিশনে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাছাড়া বিচারক এসপিনোজার বরখাস্তের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে তার রায়, যেখানে তিনি একজন মেক্সিকান অভিবাসীকে মুক্তি দিয়েছিলেন, যার বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে হত্যার হুমকি দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। তদন্তে প্রমাণিত হয়, ওই অভিবাসীকে ফাঁসানো হয়েছিল। এসপিনোজা বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী ন্যায্য রায় দিয়েছেন এবং সেটার জন্য গর্বিত।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ইমিগ্রেশন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচারক বরখাস্ত, পদত্যাগ, আগাম অবসর এবং বদলিসহ মোট ১০৬ জন বিচারক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কোর্ট ছেড়ে গেছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব প্রফেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্সের তথ্যমতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ ইমিগ্রেশন বিচারক রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অধীনস্থ এক্সিকিউটিভে অফিস ফর ইমিগ্রেশন রিভিউ এসব বরখাস্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বিচারক পেইটন বলেন, ২০১৬ সালে যে বিচার বিভাগের সঙ্গে আমি যুক্ত হয়েছিলাম, এখন সেটি একেবারেই ভিন্ন। দেশের জনগণের এটা জানার অধিকার আছে, আমাদের ইমিগ্রেশন কোর্টে আসলে কী ঘটছে। এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচারিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন