যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিদ্বেষমূলক (ইসলামোফোবিক) হামলার মধ্যে এবার মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্রিন্স জর্জেস কাউন্টির লরেল শহরের একটি মসজিদে হামলার হুমকির ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ জুলাই ভোরে ফজরের নামাজের সময় লরেল শহরের ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টার অব লরেল মসজিদে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি প্রবেশ করে অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মসজিদের ঠিকানা ৭৩০৬ কোনটি রোড, লরেল, মেরিল্যান্ড ২০৭০৭।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। ফজরের নামাজ চলাকালে মুসল্লিরা যখন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন ওই ব্যক্তি মসজিদের ভেতরে ঢুকে হুমকিস্বরূপ বলে, আমি গিয়ে আমার অস্ত্র নিয়ে আসছি, সবার সঙ্গে হিসাব চুকাতে হবে।
এই ঘটনাকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত ও ভয়ংকর একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে মুসলিম অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ঘটনাটিকে হেইট ক্রাইম (বিদ্বেষমূলক অপরাধ) হিসেবে বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। মেরিল্যান্ড স্টেট পুলিশ ও প্রিন্স জর্জেস কাউন্টি পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে।
মার্কিন সমাজে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মেরিল্যান্ডের লরেল শহরের একটি মসজিদে প্রার্থনার সময় অস্ত্রের হুমকি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ধর্মীয় বিদ্বেষ কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নয়, বরং ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক সহাবস্থানের ওপরও ভয়ানক প্রভাব ফেলছে এবং এই বাস্তবতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উভয় পর্যায়ে জরুরি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
কেয়ারের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর এবং এতে স্থানীয় মুসলিমদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সংগঠনটি অনুরোধ জানিয়েছে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন এলাকাটিতে নিরাপত্তা জোরদার করে এবং দ্রুত সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে তাকে গ্রেফতার করে। সংগঠনটির মেরিল্যান্ড শাখার পরিচালক জাইনাব চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ উপাসকদের প্রতি এই ধরনের হুমকিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানাই। এটি শুধু একটি মসজিদ নয়, বরং গোটা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আমরা চাই, পুলিশ এই ঘটনাটিকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করুক এবং দায়ী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনুক।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রদায়ের কেউ যদি ওই ব্যক্তির সম্পর্কে কোনো তথ্য জেনে থাকেন, তাহলে তা প্রিন্স জর্জেস কাউন্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে অবিলম্বে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
লরেল শহরের ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারে ফজরের নামাজের সময় ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ হুমকির ঘটনা চরমভাবে নিন্দাযোগ্য। এটি কেবল একজন উগ্র ব্যক্তির আচরণ নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি সচেতন প্রচেষ্টা। শান্তিপূর্ণ উপাসনালয়ে প্রবেশ করে অস্ত্রের হুমকি দেওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত এবং সমাজে বিভেদ তৈরির জঘন্য অপচেষ্টা।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ইসলামোফোবিয়া একটি বাস্তব ও উদ্বেগজনক বাস্তবতা। তাই এ ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই সহনীয় করে তোলা যায় না। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং ঘটনাটিকে হেইট ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে, সরকারের উচিত দেশের প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমাজের প্রতিটি স্তরে ধর্মীয় সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান জাগ্রত করতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।