৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫০:৫২ পূর্বাহ্ন


মেয়রের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ইমিগ্রেশন অভিযান অব্যাহত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
মেয়রের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ইমিগ্রেশন অভিযান অব্যাহত লস অ্যাঞ্জেলসে ইমিগ্রেশন অভিযান


মার্কিন ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা গত ৭ জুলাই সোমবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ম্যাকআর্থার পার্ক এলাকায় এক বড়সড় অভিযান পরিচালনা করে। অনেকটা হলিউড সিনেমার দৃশ্যের মতো সশস্ত্র অফিসার, ঘোড়সওয়ার বর্ডার পেট্রোল এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে এ অভিযান চালানো হয়। তবে যাদের লক্ষ্য করে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছিল-সেই অনিবন্ধিত অভিবাসীদের কাউকেই তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সকাল ১০:৩০টার দিকে পার্কে পৌঁছে ফেডারেল বাহিনী। এর আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) সেখানে অভিযান চালাবে। এলাকায় ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় পোস্টার লাগানো হয়েছিল যাতে লেখা ছিল ‘লা মিগ্রা আসছে’। স্থানীয় বাসিন্দা ও মানবাধিকার কর্মীরা আগেই প্রস্তুত ছিলেন। কেউ কেউ হোম ডিপো এলাকায় এজেন্টদের গাড়ি দেখে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে সবাইকে সতর্ক করেন। প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ ফেডারেল গাড়ির টায়ার কেটে দেয় বলেও জানা গেছে।

মেয়র ক্যারেন বাস পার্কে গিয়ে সরাসরি কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এক লাইভ সংবাদ সম্প্রচারে দেখা যায়, তিনি বলেন, তারা যদি চলে যাওয়ার পরিকল্পনায় থাকে, তাহলে এখনই চলে যাক। তিনি আরো বলেন, এটা অগ্রহণযোগ্য। আজ পার্কে যারা ছিল, তারা কোনো অপরাধী নয়, ওরা ছিল শিশুরা, ওদের সামার ডে ক্যাম্প চলছিল।’ মেয়র বাস আরো বলেন, আমাদের শহরের পার্কে সশস্ত্র ফেডারেল বাহিনীর উপস্থিতি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ও অনৈতিক। যারা আজ এখানে ছিল, তারা ছিল পরিবার, শিশু এবং সাধারণ মানুষ, কোনো অপরাধী নয়।

এলাকার কাউন্সিল মেম্বার ইউনিসেস হেরনান্দেজ বলেন, ম্যাকআর্থার পার্ক পশ্চিম উপকূলের এলিস আইল্যান্ড। এই জায়গাটিকে টার্গেট করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে এখানে যারা থাকে, তারা আমেরিকান স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। তিনি আরো সতর্ক করে বলেন, আজ যা লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘটছে, তা আগামীকাল আপনার শহরেও ঘটতে পারে।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি বাজেট বিল স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন অভিযান ও আটক উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে। এরই অংশ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলসে গত জুন মাসে মাত্র ১৬ দিনে ১ হাজার ৬০০-এরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবারের অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী উপস্থিত ছিলেন। কেউ কেউ মেক্সিকান ও সালভাদোরান পতাকা নিয়ে সেøাগান দেন। অনেক দোকানদার দ্রুত তাদের দোকান বন্ধ করে দেন। অভিযানের সময় বর্ডার পেট্রোলের সহকারী চিফ ডেভিড কিম মেয়র বাসকে তার ফোন দেন, যার মাধ্যমে তিনি ইউএস বর্ডার পেট্রোল সেক্টর চিফ গ্রেগ বোভিনোর সঙ্গে কথা বলেন। পরে বোভিনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা আবারও ম্যাকআর্থার পার্কে ফিরবো কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্য এলাকায় অভিযান চালাবো। যারা নিজেরাই দেশ ছাড়তে চায়নি, এবার তাদের আমরা সাহায্য করবো।

অন্যদিকে অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলো সম্প্রতি বোভিনোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ইমিগ্রেশন অভিযানে সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়াসহ ১৮টি অঙ্গরাজ্য এই মামলার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। মামলার শুনানি এই সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিবাসী সম্প্রদায়ে ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এটি কেবল ভয় ছড়ানোর একটি রাজনৈতিক কৌশল, বাস্তব কোনো অপরাধ দমন নয়।

শেয়ার করুন