৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৬:৩২ অপরাহ্ন


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা
গুজবে কান দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা নাজেহাল হচ্ছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
গুজবে কান দিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা নাজেহাল হচ্ছে আওয়ামী লীগের পতাকা


২২ মে বিকালের পরে থেকেই সারা দেশে একটা থমথমে ভাব। সবার মুখে একটা কথা-কি যেনো হচ্ছে ঢাকায়? বিশেষ করে ২২ মে’তে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বসানোর দাবিতে রাজধানী যখন বলা চলে পুরো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল তখন আরেক পাশ অর্থ্যাৎ শাহবাগে এলাকাও অচল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ২২ মে’তে ওইদিন সকাল ১০টায় শাহবাগে অবস্থান করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। 

এসময় সারা ঢাকা একপ্রকার অচল হয়ে গেলে মানুষ একদিকে যেমন উৎকণ্ঠিত হন। তেমনি চরম ভোগান্তিতে পড়েন সর্বস্তরের জনগণ। আর এমন মুহূর্তে বিকালের দিকে খবর রটে যায় অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ করতে পারেন । এমন কথা জানাজানি হওয়ার পর ২২ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে দেন ইশরাক হোসেন। অন্যদিকে সাত ঘণ্টা পর রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছাড়েন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেল ৫টার দিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অবস্থান কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আওয়ামী লীগের নড়াচড়া শুরু

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করে ফেলে দেশ ছাড়ছেন-এমন খবরে আকাশ বাতাস প্রায় প্রকম্পিত। এমন সুযোগে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় খোদ ঢাকায় এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বলা চলে ধরেই নেয়া হয় যে যা ঘটতে যাচ্ছে তাতে সবচেয়ে বড়ো লাভবান হবে টানা ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে পরে জনরোষে পড়ে পদত্যাগ করা বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা

এদিকে বিদেশি সংবাদমাধ্যেমেও প্রচার পায় নানান ধরনের রমরমা খবর। কেউ কেউ লিখেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস ‘সার্বিক বিষয়ে’ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার খসড়াও তৈরি করে ফেলেছিলেন, মানে ইঙ্গিত করা হয় পদত্যাগ করছেন তিনি। বিদেশী গণমাম্যমে খবর প্রকাশিত হয় আগামী সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যে ‘বিরোধ’ তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম বিষয়টি দেখিয়েছে ‘নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতার লড়াই’ হিসেবে। কেউ কেউ শিরোনাম করেছে ‘নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও ইউনূসের মতবিরোধ’।

কোথাও কোথা আওয়ামী লীগের শোডাউন হামলা

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের “পদত্যাগ এবং পালিয়ে যাওয়ায়” গুজব শুনে শোডাউন ও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে হামলার প্রস্তুতির খবর প্রকাশিত হয়। বলা হয় শোডাউন নেওয়ার অভিযোগে নোয়াখালীর চাটখিল থেকে দুজনকে আটকও করেছে পুলিশ।

মিথ্যা প্রচারণা খেসারত

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করে ফেলে দেশ ছাড়ছেন-এমন খবর প্রচার পেলে অনেক অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজধানীসহ সারা দেশে একটা পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ নিচ্ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু আসলে কি কিছু সত্যিই না-কি তোমার-আমার খেলা হচ্ছে- তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহীরা কর্ণপাত করেনি। আর এমন অবস্থায় আইন শৃংঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। আর এতে করে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অবশ্য এরা শোডাউনের জন্য নয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে তারা বলা চলে গ্রেফতারের মুখে পড়েন। এই সময়ে সারাদেশের আরও কয়েকটি স্থানে ব্যাপক অভিযান চালায় আইন শৃংঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা। কুমিল্লায় ‘গোপন বৈঠক’ করার অভিযোগ এসে সেখা থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় আশরাফ উদ্দিন নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতা-নেত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মহেশখালীতে পুলিশের অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী সাধারণরাই

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করে ফেলে দেশ ছাড়ছেন—এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু এর খেসারত দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের একেবারে সাধারণ নেতাকর্মীদের। এনিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত এই দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ দলটির নেতৃত্বের একটি বিরাট অংশ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন সবার অজান্তে। তারা দেশেও সুখে ছিলেন, আবাব এখন বিদেশেও ভালোভাবে অবস্থান করছেন। কিন্তু এরা বিদেশে বসে বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। 

শেয়ার করুন