৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৬:৪৮ পূর্বাহ্ন


নড়াইল বিএনপির সভাপতির অনুসারীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ
দেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের ওপর একের পর এক হামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
দেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের ওপর একের পর এক হামলা আব্দুল লতিফ সম্রাটকে কর্মীরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে


শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন মিডিয়ায় বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনা যতদিন সরকারে ছিল বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। অনেক সময়ই দিনের ভোট রাতে হয়েছে, আবার ভোট ডাকাতিও হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর সবার প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হবে এটা অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল। এমন প্রত্যাশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃবৃন্দেরও। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অনেক নেতা বাংলাদেশে গিয়ে সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন। কিন্তু এই গণসংযোগ লোকাল নেতারা ভালভাবে দেখছেন না। যে কারণে অনেকেই হামলার শিকার হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ সোলায়মান ভূইয়া হামলার শিকার হয়েছে। এই দুই নেতার ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা। তারা বলেন, যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্ভে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। তারা আরো বলেন, প্রবাস থেকেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। অনেক সময় দেশে যারা ছিলেন তারা আন্দোলন করতে পারেননি, কিন্তু প্রবাসের নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছেন। যে কারণে অনেকের নামের মামলা হয়েছে। যেতে পারেননি দেশে। তারা বলেন, নির্বাচন করার অধিকার প্রবাসের নেতাদেরও রয়েছে। দল যদি মনোনয়ন দেয়, তাহলে তারা নির্বাচন করবেন। কিন্তু তার আগেই কেন তাদের ওপর হামলা? এ ব্যাপারে তারা দলীয় হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নড়াইলের কালিয়ায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সম্রাটের গাড়িবহরে হামলা-ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৮ মে সন্ধ্যায় কালিয়া উপজেলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন আবদুল লতিফের পক্ষের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে তার লোকজন এ হামলা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার আনোয়ার হোসেন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা ইউসুফ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রোববার বিকালে কালিয়া উপজেলার বেন্দারচর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে ঢাকা থেকে কালিয়ায় আসছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ সম্রাট। দুপুরের দিকে কালিয়া উপজেলার চাপাইল সেতু এলাকায় পৌঁছালে তাকে বরণ করতে গাড়িবহর নিয়ে যান তার অনুসারী উপজেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, গাড়িবহরটি কালিয়ার দিকে আসার পথে যোগানিয়া এলাকায় পৌঁছলে জেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের নির্দেশে তার লোকজন হামলা করেন। হামলা চালিয়ে আবদুল লতিফের ব্যবহৃত গাড়িসহ অন্তত ৪০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আবদুল লতিফ সম্রাটসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘শনিবার খুলনায় বড় প্রোগ্রাম সেরে আমি ও আমার ভাইয়েরা ঢাকায় চলে আসি। রোববার দুপুরে ঘুম থেকে ওঠার পর শুনতে পাই এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া তো দূরের কথা, আমি বা আমার ভাইয়েরা কেউ জড়িত নই। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ।’ এ ঘটনায় দুপুরের পর থেকে কালিয়া উপজেলা শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে বর্তমানে পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে নড়াইল জেলা পুলিশের মুখপাত্র পরিদর্শক মীর শরিফুল হক বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টহল চলছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ সোলায়মান ভূইয়াও বাংলাদেশে গিয়ে গণসংযোগ করতে গিয়ে নিজ এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলো কোয়ালিটি লোকজন, যোগ্য এবং দুর্নীতি মুক্ত। এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এগিয়ে। তারা প্রবাসে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবেন। তিনি এই ঘটনায় দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু আব্দুল লতিফ সম্রাট এবং আলহাজ সোলায়ান ভূইয়ার ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। দেশে যেতে পারেননি, মামলা করা হয়েছে। দেশে কেউ যখন মাঠে নামতে পারেনি, আমরা সোচ্চার ছিলাম। বিক্ষোভ করেছি জাতিসংঘ এবং হোইয়াই হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে। আমাদের আন্দোলন দেশের নেতাকর্মীদের উৎসাহ জুগিয়েছে। সুতরাং তারা মনোনয়ন চাইতেই পারেন, নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করতে পারেন, মনোনয়ন পেলে নিবাচন করবেন, আর মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করবেন না, তাই বলে তাদের ওপর কেন হামলা চালানো হবে?

শেয়ার করুন