এনসিপি এবং ছাত্র আন্দোলনের লাগাতার আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিশেষ বৈঠক শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বলবত থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয় গত ৯ মে সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ড্রাইভার সিটি প্লাজায়। একই সময়, একই স্থানে মিষ্টি বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হতে থাকেন এবং যথারীতি তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে চলে যান। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে চলে যাওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জ্যাকসন হাইটসে উপস্থিত হন। আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকজন বিএনপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তারা যখন স্লোগান দিচ্ছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করছিল- ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের জনৈক জয় নামে একজন ইউনূস সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে এবং আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের আসার জন্য ফোন করে। আওয়ামী লীগের নেতারাও ওই সময় ডাইভারসিটি প্লাজায় উপস্থিত হন। স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলে। এক সময় কথাকাটাকাটি এবং ধাক্কাধাক্কি। চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলে কে বা কারা পুলিশ কল করে। পুলিশ আসার আগেই আওয়ামী লীগ নেতারা কেটে পড়ে। এই সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এক নেত্রী তার সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেন। যারা মধ্যে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছেন।
আ.লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সংবাদ জানার পরই নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, শেখ হাসিনা মঞ্চ, জেনোসাইড একাত্তর ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। গত ১০ মে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গগনবিদারি স্লোগানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসকে গণশত্রু হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে তাকে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মধ্যদিয়ে ইউনূস তার রাজাকারি চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবৈধ ইউনূস সরকারের কোনো নির্দেশ বাংলাদেশের সচেতন মানুষ কখনো মানবে না বলে উল্লেখ করে বক্তারা ইউনূসের অন্যায়-অবিচার আর দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বক্তব্য প্রদানকারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ড. প্রদীপ কর, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আবুল হাসিব মামুন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, শাহীন আজমল, অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার, তারিকুল হায়দার চৌধুরী, দরুদ দিয়া রনেল, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের মিয়া, সেক্রেটারি কামাল হোসেন মিঠু, সহ-সভাপতি মো. জাফরউল্লাহ, নুরুল আবসার, শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালালউদ্দিন জলিল, সেক্রেটারি কায়কোবাদ খান, কাশেম ভুইয়া, খসরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, খান শওকত, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কিবরিয়া, নুরুজ্জামান সর্দার, সাখাওয়াত বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন আজাদ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, সোলায়মান আলী, আব্দুল হামিদ, মফিজুল ইসলাম, আলী হোসেন গজনবী, তুলন মিয়া, আশফাক মাসুক, জহুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, জেড এ জয়, যুবলীগ নেতা শেখ জামাল, রহিমুজ্জামান সুমন, জাহিদ খন্দকার, ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রিচি, শাহানারা রহমান, মমতাজ শাহনাজ প্রমুখ।
সকলে সমস্বরে স্লোগান ধরেন : আমার মাটি আমার মা-করিডোর হবে না, সেন্ট মার্টিন দেব না-আমার মাটি আমার মা, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।