৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২৯:৪৪ অপরাহ্ন


বিক্ষোভে গ্রেফতার নিউইয়র্কের মেয়র
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
বিক্ষোভে গ্রেফতার নিউইয়র্কের মেয়র মেয়র রাস বারাকা


নিউ জার্সির নিউইয়র্ক সিটির মেয়র রাস বারাকা গত ১০ মে একটি নতুন অভিবাসন আটক কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করার সময় গ্রেফতার হন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর সঙ্গে চুক্তির আওতায় ডেলানি হল নামের এই কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে একটি বিতর্কিত বেসরকারি কারা সংস্থা জিইও গ্রুপ।

প্রতিবাদ চলাকালে অনধিকার প্রবেশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে মেয়র বারাকাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে কয়েক ঘণ্টা হেফাজতে রেখে সন্ধ্যায় মুক্তি দেওয়া হয়। এ ঘটনা অভিবাসন নীতিমালা, আইসের ভূমিকা এবং বেসরকারি বন্দিশিবির নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

মুক্তির পর গাড়ি থেকে নামার সময় বারাকা তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কিছুই ভুল করিনি। যদিও মামলা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে জানান, তার আইনজীবী ও বিচারকের অনুরোধে তিনি আপাতত চুপ থাকছেন। এরপর তিনি অভিবাসীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমাদের সমাজে বিভাজন সৃষ্টিকারীদের আমরা আর সহ্য করবো না। মেয়র বারাকার স্ত্রী লিন্ডা বারাকা বলেন, ওরা কাউকে গ্রেফতার করেনি, শুধু আমার স্বামীকে করেছে। তারা তাকে উদাহরণ বানাতে চেয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। নিউজার্সির অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি আলিনা হাব্বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, বারাকা আইনের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। ডেলানি হল কেন্দ্রটি, যা জিইও গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত, সেখানেই এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিউজার্সির কংগ্রেস সদস্য রবার্ট মেনেনডেজ, লা মনিকা ম্যাকআইভার এবং বনি ওয়াটসন কোলম্যানসহ বারাকা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ফেডারেল কর্মকর্তারা তাদের বাধা দিলে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়। প্রতিবাদকারী ভিরি মার্টিনেজ বলেন, ওরা বারাকাকে হেনস্তা করে গ্রেফতার করে একটি অচিহ্নিত গাড়িতে তোলে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতে, কংগ্রেস সদস্যরা পূর্ব অনুমতি ছাড়াই কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তবে ওয়াটসন কোলম্যানের মুখপাত্র জানান, তারা সংসদীয় নজরদারির অধিকার প্রয়োগ করছিলেন এবং এর আগে অন্য কেন্দ্রেও একইভাবে পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, একজন কর্মকর্তা বারাকাকে বলেন, আপনি কংগ্রেস সদস্য নন, আপনি ঢুকতে পারবেন না। বারাকা এরপর পাবলিক সাইডে চলে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আইস এজেন্টরা তাকে জনসাধারণের জায়গা থেকেই হাতকড়া পরিয়ে ফের ভেতরে নিয়ে যায়।

নিউজার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ প্ল্যাটকিন বলেন, বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ ছিল এবং এতে স্টেট বা স্থানীয় পুলিশ জড়িত ছিল না। ঘটনাটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক অধিকারকর্মী ও রাজনীতিক।

ডেলানি হল কেন্দ্রটি আগে একটি হাফওয়ে হাউস ছিল এবং বর্তমানে এটি জিইও গ্রুপ পরিচালনা করছে। সংস্থাটি আইসের সঙ্গে ১৫ বছরের একটি চুক্তি করেছে, যার মূল্য ১ বিলিয়ন ডলার। জিইও গ্রুপ দাবি করেছে, এটি প্রতি বছর ৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব আনবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে নতুন করে আরো আটক কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই কেন্দ্রটি চালু হয়। বারাকা ইতিমধ্যেই এই চুক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং এখন কেন্দ্রটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) শুধু অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগকারী হিসেবেই নয়, বরং মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি এক ধরনের হুমকি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাংবিধানিক অধিকার এবং জনসাধারণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেভাবে দমন করা হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিশেষ করে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বন্দিশিবির পরিচালনা এবং সেগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব আইসের কার্যক্রমকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের নামে এমন দমনমূলক ব্যবস্থা চলতে থাকলে তা কেবল সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করবে, নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষত্নু করবে। এখন সময় এসেছে আইসের ভূমিকা ও তার কার্যক্রম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ পর্যালোচনা করার।

শেয়ার করুন