৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৬:২৩ অপরাহ্ন


দেশকে আফজাল হোসেন
নতুনদের সঙ্গে কাজ উত্তেজনাময়
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
নতুনদের সঙ্গে কাজ উত্তেজনাময় আফজাল হোসেন


আফজাল হোসেন, বাংলাদেশের খ্যাতনামা অভিনেতা ও সাহিত্যিক। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয়ের পাশাপাশি কবিতা, নাটক ও ছবির মাধ্যমে নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তার অভিনয়ের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে, যেখানে তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার মধ্যে নতুন উত্তেজনা এবং শেখার সুযোগ খুঁজে পাচ্ছেন। এর বাইরে জীবনযাপন পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শিল্পের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করেছেন। ওখানকার অভিজ্ঞতায় আলোকে আপনার কাছে আসলে জীবনটা কী?

আফজাল হোসেন: জীবনকে আগে যেভাবে দেখতাম, এখনো সেভাবেই দেখি। আমার মতে জীবনটা সুন্দরভাবে উপভোগের। আমার নানা সুযোগ রয়েছে, আমি সেটা ছবি এঁকে উপভোগ করতে পারি। ক্রিয়েটিভ নানান কাজের মধ্যে থেকে উপভোগ করতে পারি। অভিনয় করে উপভোগ করতে পারি, লিখে উপভোগ করতে পারি এবং কিছু না করে শুয়ে-বসেও উপভোগ করতে পারি। আমি কোনো না কোনোভাবে আসলে জীবনটা উপভোগ করতে চাই। আমার এ রকম কোনো প্রয়োজন নেই-এটা হতে চাই, ওটা হতে হবে। আমার জীবনে কোনো হওয়া-হয়ি নেই। দিন, বছর কাটুক একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, যেন সমৃদ্ধ হই। চিরকালই আমি সেটা করে আসছি। অ্যাট দ্য এন্ড, লাইফে হ্যাপি হওয়া এবং হ্যাপি ফিল করাটা সবচেয়ে ইমপর্ট্যান্ট।

প্রশ্ন : কিন্তু সুখী হওয়ার ধরনটা তো একেকজনের কাছে একেক রকম

আফজাল হোসেন: ওই যে বললাম, জীবনে এটা পেলাম না, এটা পাওয়ার দরকার ছিল। তাহলে ইহজীবনে কারও পক্ষে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। তোমার আজকে দু’চার-পাঁচ কলম লিখে মনে হতে পারে, যা অদ্ভুত কাজ করে ফেলেছি। ছবি এঁকে আমারও একই মনে হতে পারে। মাথার মধ্যে যদি থাকে কিছু একটা করতে হবে, সেই ভাবনাটা একটা অসুখ। একেকজন মানুষের মধ্যে তা একেক রকমভাবে থাকে। রিসেন্টলি আমি একটা কবরস্থানে গিয়েছি। গিয়ে দেখলাম, যে মানুষটা এখনো মরেনি, সে-ও তো জায়গা কিনে মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে সুখ অনুভব করে। করে না? ভাবে, মরে যাওয়ার পর থাকার জায়গাটা ঠিক করে গেলাম। প্রত্যেকটা মানুষের নানান ধরনের সুখ অনুভূতি আছে। কদিন আগে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেখানে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়- দু’জনের এক্সিবিশন দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমি তো জীবনেও চিন্তা করিনি, এই দু’জনের এক্সিবিশন দেখার সুযোগ হবে। এটা বিশাল প্রাপ্তি না? কতজনই তো কত দরকারে যাচ্ছে, কিন্তু এটা তো হচ্ছে না। এই যে পেলাম, এই যে উপলব্ধি, এটাই তো হ্যাপিনেস।

প্রশ্ন: সম্প্রতি ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া ‘২ষ’ সিরিজের ‘অন্তরা’ পর্ব সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?

আফজাল হোসেন: ‘অন্তরা’ পর্বটি প্রথম সিজনের ’মিষ্টি কিছু’ পর্বের সিক্যুয়েল, যেখানে ‘মিষ্টি কিছু’ যেখানে শেষ হয়েছিল, ‘অন্তরা’ সেখান থেকেই শুরু হয়েছে। এই পর্বটির প্রেক্ষাপট বেশ সিরিয়াস এবং আমার জন্য এটি কাজ করার এক ভিন্ন ও মজাদার অভিজ্ঞতা ছিল। সব মিলিয়ে, কাজটা খুব ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: আপনি তো নিয়মিত অভিনয় করেন না, তবে নুহাশ হুমায়ূনের ’ষ’ সিরিজের দু’টি সিজনে কাজ করেছেন। বিশেষ কোনো কারণ ছিল কি?

আফজাল হোসেন: নুহাশের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য খুব আনন্দের। ওর ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা এবং নতুন কিছু ভাবতে পারে। যখন তার স্ক্রিপ্ট পড়লাম, সেটা দেখে মনে হলো, এমন নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করতে পারলে নিজের কাজের মানও উন্নত হবে। এই কারণে দু’টি সিজনেই কাজ করা।

প্রশ্ন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আপনার কাজের রেসপন্স কেমন?

আফজাল হোসেন: আমি কখনোই রেসপন্স নিয়ে চিন্তা করি না। তবে, এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারা, যা বিশেষ, ভিন্ন এবং সবার আগ্রহ তৈরি করে, সেটাই বড় ব্যাপার। যখন প্রথম ’পেট কাটা ষ’ এল, তার প্রতিটি গল্পই আলাদা ছিল, যা দেখে দর্শক চমকে গিয়েছিল। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা টেলিভিশন নিয়ে আগ্রহী ছিল না, তাদের মধ্যে নতুন একটি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। সেটা আমি খুব প্রশংসনীয় মনে করি।

প্রশ্ন: এখনও কি নিয়মিত ওটিটিতে কাজ করবেন?

আফজাল হোসেন: এটা বলা যাবে না। অভিনয় আমার পেশা নয়, বরং ভালোবাসার জায়গা। আমি কখনোই অভিনয়ের সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে থাকতে চাইনি। এটি আমার জন্য একটি আবেগের জায়গা। তাই, যখন মনে হবে কাজটা ভালো লাগবে এবং নতুন কিছু হবে, তখনই তা করবো।

প্রশ্ন: আপনি তো ছবি আঁকতেও পছন্দ করেন। অনেকদিন পর আবার নতুন কিছু বানাচ্ছেন, কী সেটা?

আফজাল হোসেন: হ্যাঁ, আমি গতকাল রাতে আমারই লেখা কবিতার ভিডিও চিত্র বানাচ্ছিলাম। কবিতা পড়ায় উৎসাহ কম, কিন্তু যদি সেটি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায়, অনেকেই আগ্রহ নিয়ে শুনবেন এবং দেখবেন। কবিতা যদি সঠিকভাবে পরিবেশন করা যায়, তাহলে দর্শকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।

প্রশ্ন: আপনার কবিতা লেখার অভ্যাস কেমন?

আফজাল হোসেন: আমি ছাত্রজীবন থেকেই কবিতা পড়তে ভালোবাসি। আর্ট কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের কাছে কবিতা পড়তে বলতেন। তখন থেকেই কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। কবিতার জন্য কোনও পরিকল্পনা করে লেখা সম্ভব হয় না। কখনও কখনও একসাথে অনেক কবিতা চলে আসে, আবার কখনও বেশ কিছু সময় কিছু আসে না। কবিতা মনের দরজায় কড়া নড়ে, তখন আমি তাকে স্বাগত জানাই।

প্রশ্ন: আপনার কবিতার বইগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন।

আফজাল হোসেন: আমার প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘তিন নারীর পাঠশালা’ ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ‘শুধু একটাই পা’ বের হয় এবং আরও কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, কবিতা এমন কিছু যা শূণ্য থেকে আসে এবং হৃদয়ে তার ছোঁয়া থাকে।

প্রশ্ন: নতুন কোন লেখালেখির কাজ করছেন?

আফজাল হোসেন: বর্তমানে আমি বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা লিখছি, যা আমার অনেক দিনের পরিকল্পনা। এছাড়া একটি উপন্যাসও লেখার চেষ্টা করছি। উপন্যাস লিখতে অনেক সময় লাগে, কারণ এটি চিন্তা-ভাবনা করে লেখা হয়। কবিতার মতো নয়, যেখানে একেবারে spontaneitz থাকে।

প্রশ্ন: আপনার নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করেছেন, এর সম্পর্কে কিছু বলুন।

আফজাল হোসেন: হ্যাঁ, সম্প্রতি আমি মুকিতুল বারীর পরিচালনায় ‘শিল্পজীবি’ নামে একটি সিনেমায় কাজ শুরু করেছি। এটি একজন লেখক এবং তার লিখতে না পারার সংকটের গল্প। এখানে আমার বিপরীতে আফসানা মিমি অভিনয় করছেন। সিনেমার এই নতুন ধরনের গল্পে অভিনয় করতে খুবই মজা পাচ্ছি।

প্রশ্ন: আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, সেটা কবে দেখা যাবে?

আফজাল হোসেন: আমি আসলে ছোটদের জন্য সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছি। ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ’ছোটকাকু’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে।

প্রশ্ন: এত সব কাজের মধ্যে কখনো মনে হয় না, নিজের প্রতি সুবিচার করা হয়নি?

আফজাল হোসেন: জীবনে যা করেছি, তা ভালোবেসে করেছি। জীবনটা উপভোগের বিষয়, লাভের জন্য নয়। আমি কখনোই তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে চাইনি। কিছু একটা হতেই হবে-এমন তাড়না ছাড়াও জীবনটা পূর্ণ রাখতে চাই।

শেয়ার করুন