৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২২:২০ অপরাহ্ন


নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে পরিবর্তনের ছোঁয়া
সিদ্দিকুর রহমান সুমন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৪
নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে পরিবর্তনের ছোঁয়া কনস্যুলেট অফিসে বসার স্থান


আমেরিকায় নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সুবিধা পেতে, যাতে হয়রানির শিকার না হতে হয়, তার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ কনস্যুলেট। বাংলাদেশির সংখ্যা দিনদিন বাড়ার কারণে বাড়ছে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের চাহিদা। ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাস থাকায় নিউইয়র্কে বসবাসরত কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এটাই একমাত্র ভরসাস্থল। যেখানে প্রতিদিন কয়েকশ সেবাপ্রার্থী ভিড় করেন, তাদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার মতো কাজগুলোর জন্য।

বিগত সময়ে স্থান সংকুলানসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাপক অভিযোগ ছিল কনস্যুলেট সেবা নিয়ে, আগে নিউইয়র্কের পাঁচ বোরোতে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কনস্যুলেট সেবার কার্যক্রম থাকলে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। 

অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের পর ৫ আগস্টে প্রবাসীরা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানান প্রবাসীর। তবে স্থান সংকুলান নিয়ে বিগত সরকারের আমল থেকেই উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর থেকে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর করা হয় কনস্যুলেট অফিস। লং আইল্যান্ড সিটির ৩১-১০ ৩৭তম অ্যাভিনিউ, স্যুইট-২০১ (২য় তলা) চলছে কার্যক্রম, যা পুরোনো অফিস থেকে প্রায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিট বেশি। হয়েছে অনেক কিছুর পরিবর্তন। সেবাগ্রহীতাদের জন্য থাকছে পর্যাপ্ত জায়গা। রয়েছে অতি সন্নিকটে বাস-ট্রেন স্টেশন।

তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসছে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে। মানি অর্ডারসহ নানা ক্ষেত্রে অফিস ফি দিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা নানা ঝামেলায় পড়েন, এমনকি অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও পেমেন্টের কারণে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারেন না, অনেকে পোস্ট অফিসে না করে বেশি টাকা খরচ করে মানি অর্ডার করেন, তাই সবার কথা বিবেচনা করে কনস্যুলেট অফিসে ডিজিটাল মেশিনে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে কার্ড দিয়েই তারা সব ধরনের পেমেন্ট করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সরকারি ফির সঙ্গে প্রতিটি লেনদেনের জন্য ৩ শতাংশ ব্যাংক সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। এছাড়া মানি অর্ডারের মাধ্যমে ফি পরিশোধের প্রচলিত ব্যবস্থাও অব্যাহত থাকবে। যদিও জনবল-সংকটের সঙ্গে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে। 

মিশিগান থেকে আগত দুই সেবাগ্রহীতা জানান, কাজকর্ম রেখে বিমানের ফ্লাইটে নিউইয়র্ক এসে যদি কাজ না হয়, তাহলে কষ্ট লাগে। সেবার জন্য কনস্যুলেটে আসা এস রহমান জানান, বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে দীর্ঘসময় ব্যয় হয়, এগুলো থেকে মুক্তি দেওয়া দরকার। প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। তাই সুবিধামতো জায়গায় স্থায়ী কনস্যুলেট এবং একটা পাসপোর্ট মেশিন হলে একদিকে যেমন সেবাগ্রহীতারা উপকৃত হতো ঠিক, তেমনি সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আয়ও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন।

কাউন্সেলর ও হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান জানান, বর্তমান অফিসকে বেছে নিতে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে, নিউইয়র্কে প্রচুর বাংলাদেশি থাকায় সেবাগ্রহীতাদের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের একটা জায়গা খোঁজা হচ্ছিল। বর্তমান অফিসের জন্য মালিকপক্ষ কোনো সিকিউরিট মানি রাখেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু নির্ধারিত স্কয়ারফিট নয়, এর বাহিরেও আমরা অনেক স্পেস পেয়েছি যা ইতিবাচক। সেবাগ্রহীতাদের জন্য কনস্যুলেট অফিসে পার্কিং, নামাজের স্থান, ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আগামীতে বিল্ডিংয়ের সামনে কনস্যুলেটের একটা সাইনবোর্ডও লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান।

কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা জানান, পেশাগত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট, ভিসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেবা নিতে আসেন নিউইয়র্কের পাঁচটি বোরো থেকে। পুরোনো অফিস আর বর্তমান অফিসের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সবাইকে সেবা দেওয়ার।

আগে নিউইয়র্কে পাঁচ বোরোতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেবা দেওয়ার কার্যক্রম অফিসিয়াল কিছু প্রক্রিয়ার কারণে বন্ধ আছে। আগামী দিনে বছরে অন্তত একদিন দূরত্ব অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাফেলোতে ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন