ছয় বছর বিরতির পর আবারও অভিনয়ে ফিরেছেন শার্লিন ফারজানা। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা দুই জায়গাতেই নিজের অভিনয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী। সংসার, মাতৃত্ব আর নিজের জীবনের নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়ে আজ তিনি আরও পরিপক্ব, আরও আত্মবিশ্বাসী। ক্যামেরার সামনে ফেরা, চরিত্র নির্বাচনে স্বাধীনতা এবং নিজের ভেতরের নায়িকা খোঁজার গল্প সব মিলিয়ে শার্লিন এখন এক নতুন যাত্রায়। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: অভিনয়ে ফেরার পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
শার্লিন ফারজানা: যখন পরিবারে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, ভেবেছিলাম আর হয়তো ক্যামেরার সামনে ফেরা হবে না। কিন্তু ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল-মনে হচ্ছিল, নিজেকে আবার খুঁজে পেতে চাই। অভিনয়টা আমার ভালোবাসার জায়গা। ওই ভালোবাসাই বারবার টেনে এনেছে। আরেকটা বিষয়, সন্তানদের বড় করতে করতে বুঝলাম, নিজেকে ধরে রাখাটাও জরুরি। নিজেকে নতুন করে গড়তে অভিনয়ই আমার সেরা মাধ্যম।
প্রশ্ন: সন্তান, সংসার আর ক্যারিয়ার- এই তিনটিকে কীভাবে ব্যালান্স করছেন?
শার্লিন ফারজানা: আগে খুব অগোছালো ছিলাম। এখন ব্যালান্স করা শিখেছি। সন্তানদের সময় দিই, আবার নিজের জন্যও সময় রাখি। পরিকল্পনা করে চলি, তাতে সব কিছু সহজ হয়ে যায়। পরিবারকে সময় দেওয়াটা যেমন দরকার, তেমনি নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখাটাও জরুরি।
প্রশ্ন: বিরতির পর আবার সিনেমার অভিনয়ে ফেরা। কেমন লাগছে?
শার্লিন ফারজানা: সত্যি বলতে, শুটিংয়ে ফিরে এত ভালো লেগেছে, বলার মতো নয়। বাসায় বসে থাকাটা আমার একদম ভালো লাগে না। সিনেমার আগে আমি চার-পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেছি, একটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছি। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় সিনেমার শুটিং শেষ হলো। অভিনয়ে ফেরা যেন নিজের জায়গায় ফিরে আসা।
প্রশ্ন: ‘জীবন আমার বোন’ চলচ্চিত্রে কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন?
শার্লিন ফারজানা: আমি ‘নীলা’ চরিত্রে অভিনয় করছি। ছবিটি ১৯৭১ সালের একটি পরিবারের গল্প নিয়ে। আমার চরিত্রটা পরিবারের বাঁধন থেকে মুক্ত হওয়ার, নিজের স্বাধীনতা খোঁজার। এটি ভিন্ন ধরনের একটি চরিত্র, যা আমার জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন: অভিনয় থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে?
শার্লিন ফারজানা: দূরে থাকতে হয়তো আরাম লাগে, কিন্তু একধরনের শূণ্যতা কাজ করে। মনে হয়, আমি যে জায়গায় ছিলাম, সেটা হারিয়ে গেছে। কর্মটা আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কর্ম ছাড়া জীবনকে অসম্পূর্ণ মনে হয়। কাজেই ফেরাটা যেন আবার জীবন ফিরে পাওয়া।
প্রশ্ন: কোন ঘরাণা বা চরিত্রে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
শার্লিন ফারজানা: আগে একটা চাপ ছিল, যেন সব সময় নায়িকা লুকে থাকতে হবে। বিয়ের পর সে চাপটা অনেকটাই কেটে গেছে। এখন মনে হয়, নিজেকে আরও নানা রকম চরিত্রে দেখতে পারি। খল চরিত্র হোক, হরর হোক, এমনকি এলিয়েন চরিত্র হলেও আমি করতে চাই। আমি সায়েন্স ফিকশন খুব পছন্দ করি। এখন আমি আরও বেশি স্বাধীন।
প্রশ্ন: বিয়ের আগে নায়িকা হতে চাওয়ার পেছনে কোনো কারণ ছিল?
শার্লিন ফারজানা: জানি না কেন, মনে হতো ব্যক্তিজীবনেও আমাকে নায়িকা হয়েই থাকতে হবে। বিয়ের পর সেই মানসিকতা বদলেছে। এখন মনে হয়, ভালো গল্প, ভালো চরিত্র- সেইটাই গুরুত্বপূর্ণ। আগে অল্প সময়ে অনেক কাজ করে ফেলতে হতো। এখন ভাবনা বদলেছে, চরিত্র নিয়ে কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: বিয়ে ও সংসারজীবনের অভিজ্ঞতা আপনার অভিনয়ে প্রভাব ফেলেছে?
শার্লিন ফারজানা: অবশ্যই। এহসান (স্বামী) আমার জীবনে বড় ভূমিকা রেখেছে। সে খুব ম্যাচিউরড একজন মানুষ। আমি আগে পরিণত ছিলাম না, এখন অনেক বদলেছি। অভিনয়ে এ পরিণত বোধ কাজ করে।
প্রশ্ন: এখন আপনি নিজেকে কীভাবে দেখছেন?
শার্লিন ফারজানা: এখন জীবনকে উপভোগ করতে চাই। সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। একা ভালো থাকাটা আর লক্ষ্য নয়, বরং সবাইকে নিয়েই ভালো থাকা চাই। পরিকল্পনা করে চলা শিখেছি, আর তাতে আনন্দ পাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনি দুই সন্তানের মা। মা হওয়ার পর কোন পরিবর্তনগুলো সবচেয়ে বেশি অনুভব করেছেন?
শার্লিন ফারজানা: আমি কখনোই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু মা হওয়ার পর বুঝলাম, এটা এক অদ্ভুত সুন্দর অভিজ্ঞতা। ওদের স্পর্শই আমাকে বদলে দিয়েছে। এখন কিছু করার আগে অনেকবার ভাবি, দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছি।
প্রশ্ন : সামনের দিনগুলোতে দর্শক আপনাকে কী ধরনের কাজে দেখতে পাবেন?
শার্লিন ফারজানা: অনেক ধরনের কাজ করতে চাই। এমনকি আইটেম গানেও যদি ভালো গল্প থাকে, মানিয়ে নিতে পারি-তাহলে করব। যেমন ‘চাঁদমামা’ গানে নুসরাতকে চমৎকার লেগেছে। ভালো কিছু হলে আমি পিছপা হই না। পাশাপাশি পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ধাঁচের একটি সিনেমায়ও কাজ করছি। অডিশন দিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।