৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২৫:৪১ অপরাহ্ন


বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের যাত্রা শুরু
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের যাত্রা শুরু বক্তব্য রাখছেন মুহাম্মদ কাদের


নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে গত ১৩ আগস্ট বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’-এর নাম ঘোষণা করা হয়। এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো, যেখানে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে গঠিত হতে যাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ফেডারেল স্বীকৃত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে যা পরিচালনা করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খ্যাতিমান ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। এরপর যথাক্রমে-যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়, যা উপস্থিত সব অতিথির মধ্যে এক বিশেষ আবেগ ও ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সোনিয়া, যিনি দক্ষভাবে পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

এরপর অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা এবং ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’-এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ কাদের, সিআইপি মঞ্চে এসে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আজকের এই মুহূর্তটি কেবল আমার জন্য নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও এক গর্বের দিন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বাস করলেও আমাদের নিজস্ব কোনো পূর্ণাঙ্গ ফেডারেল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল না। অনেক কমিউনিটি বহু আগেই নিজেদের জন্য ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। অবশেষে আজ আমরা সে দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই National Credit Union Administration (NCUA) থেকে নাম ক্লিয়ারেন্স এবং প্রি-অ্যাপ্রুভাল পেয়েছি। এটি কোনো সাধারণ অনুমোদন নয়, এটি একটি আইনানুগ, স্বীকৃত এবং ভবিষ্যতের জন্য সুসংহত আর্থিক ভিত্তি। এখন আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে প্রায় ৩০০ জন ফাউন্ডিং মেম্বার সংগ্রহ করা এবং সেইসঙ্গে মূলধন সংগ্রহ সম্পন্ন করে পরবর্তী ধাপে যাওয়া। আমি সবাইকে এ ঐতিহাসিক যাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।’

অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল এবং আরো অনেক বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতারা। তাদের সক্রিয় উপস্থিতি ও সহায়তা পুরো অনুষ্ঠানকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিনিধি, কমিউনিটির সদস্য ও উদ্যোক্তারা এ ঐতিহাসিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আত্মমর্যাদা, সক্ষমতা ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তার প্রতীক।

মুহাম্মদ কাদের বলেন, আমি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকায় বাস করছি এবং দেখেছি কীভাবে আমাদের অনেকেই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী ও পরিবার প্রধানরা ন্যায্যভাবে হালাল লোন, অটো লোন, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বাস্তবতা থেকেই আমার মধ্যে এই উদ্যোগের জন্ম। আমি চেয়েছি এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, যা হবে আমাদের মানুষের দ্বারা, আমাদের মানুষের জন্য এবং আমাদের মানুষের মালিকানায়। তিনি জানান, ‘বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন’ একটি সদস্য-ভিত্তিক সমবায় ব্যাংক, যেখানে প্রতিটি সদস্যের সমান অধিকার থাকবে এবং মুনাফা সদস্যদের মধ্যে বণ্টন হবে। এখানে ঋণপ্রাপ্তি হবে সহজ, স্বচ্ছ ও হালাল প্রক্রিয়ায়। সদস্যরা ৩ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ সুদে গাড়ি, ব্যবসা বা হোম লোন নিতে পারবেন, যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক ও লাভজনক।

উদ্যোক্তা জানান, নিউইয়র্কের জ্যামাইকা হিলসাইড অ্যাভিনিউতে হবে বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি এলাকায় শাখা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের আর্থিক সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ঘোষিত পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে রয়েছেন-শাহ শহীদুল হক, সিফা আমিন, মিনারা মাহমুদিন, মাহাফুজ আনিসুর রহমান ও সালাউদ্দিন আহমেদ।

এছাড়াও প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন-জে মোল্লা সানি, এনায়েত মুনশি, আব্দুল মান্নান, রিমি ভুইয়া, বদরুল হক আজাদ, মো. সোলাইমান, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমাদের কমিউনিটি প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠায়। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে এ অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। বেঙ্গল ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়ন আমাদের সেই সক্ষমতা দেবে, আমাদের সঞ্চয় রক্ষা করতে, সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ভিত্তি গড়ে তুলতে।

কাদের তার বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘আমি আজকের দিনটিকে একটি নতুন যাত্রার সূচনা হিসেবে দেখছি। আমরা যদি সবাই একত্রিত হই, আমাদের সম্মিলিত মেধা, শ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে এ ব্যাংকটিকে বাস্তবায়িত করি-তাহলে আমরা কেবল আর্থিকভাবে শক্তিশালী হব না, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারব এক গর্বিত উত্তরাধিকার। এটি হবে আমাদের ব্যাংক, আমাদের কমিউনিটি এবং আমাদের গর্ব।’

শেয়ার করুন