৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫০:২০ পূর্বাহ্ন


বর্তমান মার্কিন সরকার গণহারে ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়নের বিরাট মেশিন
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
বর্তমান মার্কিন সরকার গণহারে ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়নের বিরাট মেশিন


আমেরিকার ফেডারেল সরকার বিশাল অঙ্কের বাজেট নিয়ে বর্তমানে এক ধরনের গণডিপোর্টেশন মেশিনের রূপ নিয়েছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের নতুন বিশেষ রিপোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্র্যান্ট-বিরোধী, গণতন্ত্র-বিরোধী ও আমেরিকা-বিরোধী নীতির সমালোচনা করেছে। দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের কদাকার মনোবৃত্তির আক্রমণের ধরন কি, কারা এ আক্রমণের শিকার তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে এ রিপোর্টে। প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতি কত কদর্য হতে পারে তা নিয়ে রিপোর্টে বিশদ আলোচনা হয়েছে।

মাত্র ছয় মাসের রাজত্বকালে, ট্রাম্প প্রশাসন হাজার হাজার ফেডারেল কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। তার বর্তমান বিগ বিউটিফুল বিল পাস করে আমেরিকায় সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফেডারেল অর্থ কর্তনের এ ট্রাম্প প্রশাসন একই সঙ্গে তার কার্যক্রমকে লজ্জাহীনভাবে ফেডারেল সরকারকে ডিপোর্টেশনের জন্য ডিটেনশন অপারেশন চাকায় পরিণত করেছে।

যদিও প্রশাসনের ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগ করার কোনো অগ্রাধিকার ব্যবস্থা নেই, তথাপি দেখা যাচ্ছে, সরকারের ইমিগ্রেশন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বেধড়ক গ্রেফতার ও আটক করে যেসব মানুষ আইনি স্ট্যাটাস নিয়ে এ দেশে আছে, যারা কোনো প্রকার নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে না তাদের, এমনকি সময়ে সময়ে আমেরিকায় নাগরিকদের ওপর অন্যান্য আইন কার্যকর করার চাইতে ইমিগ্রেশন আইনকে অধিকহারে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর ফল হচ্ছে ফেডারেল সরকারের মৌলিক কার্যক্রম পুনর্গঠন। শুধু তাই নয় সরকার চাচ্ছে ফেডারেল, স্টেট ও স্থানীয় আইন প্রয়োগের সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে।

দেখা যাচ্ছে, আইস (ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ব্যতিরেকে আরও পাঁচটি ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অভূতপূর্বভাবে ইমিগ্রেশন খাতে গ্রেফতার ও ডিপোর্টেশন কোটা পূরণে তাদের নিয়মিত কাজবহির্ভূত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

খ্যাতিমান মিলিটারি লিডারদের আপত্তি সত্ত্বেও ন্যাশনাল গার্ড প্রতিবাদকারীদের বিতাড়ন করছে, আইসকে সমর্থন করছে এবং আমেরিকার সেনা সদস্যদের সিটিজেনদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভিসা বাতিল করছে। বিদেশি ছাত্র ও গবেষকরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অধীনে অ্যাটর্নিরা ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত মামলাকে অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকি যেমন ড্রাগ চালাচালি অথবা অন্যান্য সহিংস অপরাধ থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিককালে আইআরএসের ভেতর ডাটাতে প্রবেশাধিকার দিয়ে আইসের ইমিগ্র্যান্ট-বিরোধী তৎপরতাকে কঠোরতর করছে। সম্প্রতিক মেডিকেইড থেকেও ইমিগ্রেশন ডাটা খুঁজে বের করা হচ্ছে।

স্থানীয় পর্যায়ে ট্রাম্প প্রশাসন নিঃশব্দে ডজন ডজন পুলিশ এজেন্সিকে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত গ্রেফতারের জন্য এবং তাদের ডিপোর্টেশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আইস ইমিগ্র্যান্টদের ধরার জন্য স্টেট ও স্থানীয়দের সহযোগিতার দ্বারস্থ হয়। কিন্তু এই প্রশাসনের স্টেট ও স্থানীয় পুলিশ এজেন্সির আগ্রাসী ব্যবহার এর আগে দেখা যায়নি। 

এদিকে ইমিগ্রেশন ন্যাশনালিটি আইন (আইএনএ)-এর ২৮৭(জি) সেকশনের বয়ান অনুযায়ী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ স্টেট ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে তাদের কমিউনিটিতে আইসের ক্ষমতা দ্বিগুন করার ব্যবস্থা নিতে পারে। এসব চুক্তি সাধারণত ঐচ্ছিক চুক্তি। স্টেট ও স্থানীয় সরকার ইচ্ছে হলে তা করতে পারে। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসন এ চুক্তি সম্পাদনে গভর্নরদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। শুধু তাই নয় এ প্রশাসন তা বাস্তবায়নে হুমকি দিচ্ছে। ছয় মাসে এ প্রশাসন এই ধরনের চুক্তি বাইডেন আমল থেকে ৬গুণ বাড়িয়েছে। তারা স্থানীয় পুলিশদের আরো আগ্রাসী করে তুলছে। এভাবে ১৯ বছরের ড্রিমারকেও ইমিগ্রেশন আটকে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

এ প্রশাসন কার্যত পাবলিক সেফটির নামে ইমিগ্রেশন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে নিষ্ঠুরভাবে। প্রশাসন আমেরিকায় নাগরিক তার এমন লোকদের অপরাধী তালিকাভুক্ত করছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ ফেডারেল রিসোর্স ডাইভারশন এবং পুনঃসন্নিবেশকরণ করে ফেডারেল ও স্টেট সরকারের সম্পদ অন্যখাতে নিয়ে গিয়ে দেশকে আরো নিরাপত্তাহীন করা হচ্ছে। তাতে আমেরিকার সরকার স্টেট ও স্থানীয় নেতাদের প্রচলিত নিরাপত্তাকে পরিহার করে ইমিগ্র্যান্টদের গ্রেফতারের অমানবিক আচরণকে পোক্ত করা হচ্ছে। অধিকাংশ লোক যারা কোনো প্রকার হুমকি সৃষ্টি করছে না এবং দেশে মূল্যবান অবদান রেখে চলেছে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

আইসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অনুসন্ধান (এইচএসআই) কম গুরুত্বপূর্ণ অপরাধকে ইমিগ্রেশন খাতে নির্যাতনের জন্য অগ্রাধিকারভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এইচএসআই এজেন্টরা গত ফেব্রুয়ারি মাসে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ ধরনের নীতির পরিবর্তন শিশু নির্যাতনবিষয়ক মামলা কিংবা সাইবার এটাকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ডার্ক ওয়েব ফিন্যান্সিয়াল স্কিম, ইরান ও চীনের আনবিক ট্রাফিকার রাশিয়ায় সংঘটিত অপরাধ। বাণিজ্য ফ্রড ও স্যাংকশন অনুসন্ধানের মতো কাজ ব্যাহত হবে। রয়টার গত মার্চ মাসে অন্যান্য গর্হিত কাজে এইচএসআই এজেন্টদের নিয়োগ কমেছে বলে রিপোর্ট করেছে। এখন শিশু যৌনকারবারিদের ক্ষেত্রে আইনের তেমন প্রয়োগ নেই। এজেন্টদের অহেতুক ইমিগ্র্যান্টদের আশপাশে নজরদারির মধ্যে উদ্দেশ্যহীন কাজে ববহার করা হচ্ছে। 

ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি এবং এফবিআইর যৌথ টেরোরিজম ট্রাম্পফোর্সকে বর্তমানে মাইগ্র্যান্ট, ফার্মওয়ার্কারের ও স্থানীয় ব্যবসার মালিক যারা আমেরিকায় নাগরিক নয় তাদের গ্রেফতারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি এফবিআই, মিলওয়াকিতে আইসকে কোর্টরুম থেকে ইমিগ্র্যান্টকে গ্রেফতার করতে না দেখায় বিচারক হাননাহকে গ্রেফতার করেছে। অথচ আইস কোনো গ্রেফতারি পরওয়ানা ছাড়া ইমিগ্র্যান্টকে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। মিশিগানে এক লোককে এক ভুয়া সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর দিয়ে কাজ করায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্য কথায়, ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারীরা বর্তমানে ভয়ানক রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে কাজ করছে। সিটিজেন নয়, এমন ছাত্রদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন তার ওয়ান বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট সরকারকে বিরাট ডিপোর্টেশন মেশিন বানানোর জন্য ১৭০-১ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড দেওয়া হয়েছে। আর এভাবে আইসকে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দকারী ডিপোর্টেমন সংগঠন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এ অর্থ বহু পশ্চিমা দেশের সামরিক বাজেটের চেয়ে বেশি। গত ১ আগস্ট ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রখ্যাত সাংবাদিক পেগিন্যুনান লিখেন, আইসের কাজের জায়গা তল্লাশি করা বন্ধ করুন। তিনি বলেন, যেভাবে নেব্রাস্কা বা অন্যান্য জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ইমিগ্র্যান্টদের ধরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে তা আমেরিকাবাসী সমর্থন করে না।

শেয়ার করুন