১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:২৬:২৫ পূর্বাহ্ন


অভিবাসন কেন্দ্রে ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
অভিবাসন কেন্দ্রে ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর অধীনে পরিচালিত আটক কেন্দ্র


ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর অধীনে পরিচালিত আটক কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রায় ২০০০ ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা করা না হলেও, সরকারি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে যে, আসন্ন সপ্তাহেই এ মোতায়েন কার্যকর হতে পারে। সেনারা টাইটেল ৩২ স্ট্যাটাসে কাজ করবেন, যার অর্থ হলো তারা সংশ্লিষ্ট স্টেটের গভর্নরের অধীনে থাকবেন এবং মার্কিন আইন পসি কমিটাটাস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত হবেন না। এ আইন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীকে আইন প্রয়োগ বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দায়িত্বে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশজুড়ে অভিবাসন আইন প্রয়োগ জোরদার করার ফলে আইস হেফাজতে অভিবাসীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫৭ হাজার অভিবাসী আইসের হেফাজতে রয়েছে। এ সংখ্যা সামলাতে এবং ভবিষ্যতে আরো অভিবাসী আটক রাখার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, প্রশাসন দেশব্যাপী আটক কেন্দ্র সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। কংগ্রেস থেকে এ উদ্দেশ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে বড় পরিসরে মোতায়েন শুরু হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এ মোতায়েন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সেনারা শুধু প্রশাসনিক সহায়তায় সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং আঙুলের ছাপ সংগ্রহ, মুখের নমুনা নেওয়া, আটক কেন্দ্রের ভেতরের কার্যক্রম পরিচালনা এবং জরুরি প্রতিক্রিয়ার মতো সরাসরি অংশগ্রহণমূলক দায়িত্বও পালন করবেন। এর আগে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের আইসকে সহায়তার দায়িত্বে ব্যবহার করা হলেও তা মূলত প্রশাসনিক ও সরবরাহ সম্পর্কিত ছিল। এবার সেই দায়িত্বের পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভবিষ্যতের কার্যক্রম নিয়ে জল্পনা করতে চাই না, তবে প্রতিরক্ষা বিভাগ স্বরাষ্ট্র দফতরের অংশীদার হিসেবে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ভূখণ্ড রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এ ধরনের পরিকল্পনা তাদের আগের অনুরোধের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে প্রতিরক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে আটক কেন্দ্রের নিরাপত্তা, পরিবহন সহায়তা, খাবার বিতরণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং জরুরি সাড়া দেওয়ার কাজে সহায়তার জন্য মোতায়েনের প্রয়োজন হবে। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্টেট থেকে সেনা মোতায়েনের কথা বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব এবং প্রশাসনের পরিকল্পনার পরিধি বোঝায়।

হোয়াইট হাউস এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অভিবাসন আইন বাস্তবায়নে সামরিক বাহিনীকে আরো বেশি করে ব্যবহার করার উপায় খুঁজছে। বিশেষ করে সীমান্তে গ্রেফতার ও আটক বাড়ানোর জন্য দ্রুত বাহ্যিক সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে আইসিই ৭৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড তহবিল পেতে চলেছে। এ তহবিল দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে। তবে তা সম্পন্ন হতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যেতে পারে। ততদিন পর্যন্ত বাহ্যিক সহায়তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতরের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে গত মাসে ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল আইস সদস্যদের সহায়তা, প্রতিবাদ দমন এবং ফেডারেল সম্পদের নিরাপত্তার জন্য। যদিও তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেককেই ইতোমধ্যে দায়িত্বমুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফ্লোরিডা ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের এভারগ্লেডস এলাকায় নতুন এক আটক কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ফ্লোরিডা গার্ডের একজন মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত তাদের আটক বা আইন প্রয়োগ-সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

এ উদ্যোগগুলো সমালোচনার মুখে পড়েছে। তারা বলছেন, এটি অভ্যন্তরীণ সামরিকীকরণের একটি বিপজ্জনক নজির হতে পারে, যেখানে সামরিক বাহিনী অভ্যন্তরীণ নাগরিক কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন এবং বলছেন, এটি আটক কেন্দ্রগুলোতে মানবিক সংকট আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি একটি সাময়িক সমাধান এবং অভিবাসন আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয়।

শেয়ার করুন