যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর অধীন পরিচালিত ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে থাকা অভিবাসীরা খাবারের ঘাটতি, নিম্নমানের খাদ্য এবং অনিয়মিত পরিবেশনের অভিযোগ তুলেছেন। অন্তত সাতটি অঙ্গরাজ্যের আটক কেন্দ্র থেকে অভিবাসী ও তাদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, খাবারের পরিমাণ কম, অনেক সময় বাসি বা পচা খাবার দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে অনেক বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বর্তমানে আইসের অধীনে প্রায় ৫৭ হাজার অভিবাসী বন্দি রয়েছেন, যা কংগ্রেস অনুমোদিত ধারণক্ষমতার প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। অতিরিক্ত বন্দির কারণে খাবার সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইসের এক প্রাক্তন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হঠাৎ বন্দির সংখ্যা বেড়ে গেলে প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ডেন স্টেট অ্যানেক্স আটক কেন্দ্রে প্রায় এক বছর ধরে আটক থাকা সালভাদরীয় নাগরিক আলফ্রেডো পারাদা বলেন, খাবার এতোটাই কম দেওয়া হয় যে, প্রায়ই ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। লুইজিয়ানার উইন কারেকশনাল সেন্টারে আটক রুশ অভিবাসী ইলিয়া চেরনভ বলেন, খাবারের পরিমাণ এত কম যে আমি ওজন হারিয়েছি এবং প্রতিদিন ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছি। ওয়াশিংটনের নর্থওয়েস্ট আইস প্রসেসিং সেন্টারে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৭টি খাদ্যবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ধরা পড়েছে। এপ্রিল মাসে অন্তত ৫৭ জন বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় জানা যায়, সেদিনের বিকল্প খাবার হিসেবে পরিবেশিত কোলার্ড গ্রিনসে বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া ব্যাসিলাস সিরিয়াস ছিল।
এ অবস্থায় আরো উদ্বেগজনক হচ্ছে, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ওমবাডসম্যান অফিস যেটি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অধীনে একটি স্বাধীন তদারকি দপ্তর সম্প্রতি কর্মী ছাঁটাই বা বাজেট সংকটে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবীদের মতে, এর ফলে বন্দিরা খাদ্য, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা নিয়ে অভিযোগ জানানোর সুযোগ হারাচ্ছেন।
ডিএইচএসের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, খাবারের ঘাটতি কিংবা নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি আরো জানান, প্রতিটি খাবার পুষ্টিবিদদের অনুমোদিত এবং বন্দিদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করাই আইসের অগ্রাধিকার। তবে বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে অভিবাসন আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নীতি পরামর্শক ভেনেসা ডোজাকেজ-টরেস বলেন, খাবার নেই, খাবার কম এই অভিযোগগুলো এখন সারা দেশজুড়ে নিয়মিত হয়ে উঠেছে।