বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সংকট সৃষ্টির জন্য এই সরকারই দায়ী। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ডঃ ইউনুস আন্দোলনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে একাধিক দফায় আলোচনা করলেও সকলের মতামতকে আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ না করে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের আকাঙ্খার বাস্তবায়নকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে করণীয় নির্ধারণ করেন এবং অদ্যাবধি সে পথেই তিনি হাঁটছেন। এটা বৈষম্যমূলক এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। যা সংকটকে গভীর করে তুলছে।
বিবৃতিতে কমরেড জাহিদ বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার লুটপাট, মব ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, নারীর উপর সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ এবং দখলদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই- বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের পরোক্ষ উস্কানি ও মদদ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। যা জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। শেয়ার বাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খরব এসেছে, যা সরকারের অজানা নয়। পুরনো শিল্প ও কলকারখানা চালুর কোন উদ্যোগ নেই, বরং নতুন করে শিল্প কলকারখানা একে একে বন্ধ হচ্ছে। শ্রমিকরা ৩/৪ মাস বেতন না পেয়ে রাস্তায়, নতুন কর্মসংস্থান নেই। নতুন করে দলীয়করণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের বিভেদ ও বৈষম্যমূলক আচরণে সংকট ক্রমাগত বাড়ছে।
এছাড়াও সরকার বাম গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্ধকারে রেখে জনমতের তোয়াক্কা না করে রাখাইনের সাথে তথাকথিত মানবিক করিডোর, বিদেশি কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দরগুলো ইজারা প্রদান ও বিদেশিদের দেশের অভ্যন্তরে সমরাস্ত্র কারাখানা স্থাপনের প্রস্তাব, স্টারলিং এর সাথে চুক্তি ইত্যাদি দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এর সাথে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূরাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত। এসব প্রশ্নে সেনাবাহিনীর সাথেও সরকারের দূরত্ব দৃশ্যমান। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভূতও বটে।
তিনি বলেন, এই সরকার ইতিমধ্যে ৯ মাস অতিবাহিত করেছে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সরকার সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার নিয়ে যত শোরগোল করছে কার্যক্ষেত্রে তার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়, বরং সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শম্বুক গতিতে চলছে, ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বর ‘২৫ এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বিষয়টি সরকারের ইচ্ছার সাথে যুক্ত। কমরেড জাহিদ আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের বিষয়টি জনগণের বহুল কাঙ্খিত জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, ডঃ ইউনুস এসব ব্যর্থতা, লুটপাট, মব ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড আড়াল করতেই পদত্যাগ নাটকের হুমকি দিয়েছেন। হাসিনার মত ইন্টেরিম সরকারও তাদের সমালোচনা করলে নানারকম ট্যাগিং করার চেষ্টা করছেন- যা জুলাই ঐক্যের বিরোধী। বিবৃতিতে তিনি, সংকট সমাধানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী গণহত্যাকারীদের বিচারকে দৃশ্যমান ও গতিশীল করার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান।