১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন


মৌমাছির প্রজন্ম দুর্বল হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশকে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
মৌমাছির প্রজন্ম দুর্বল হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশকে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


বিশ্ব মৌ দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিসউক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাপা, বিসেফ ফাউন্ডেশন এবং নর্থ বেঙ্গল হানি কমিউনিটি। “কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মৌমাছি, নিরাপদ খাদ্য ও পরিবেশ রক্ষায় ঝুঁকি” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বক্তারা মৌমাছির গুরুত্ব, মৌচাষের সম্ভাবনা, কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে দেখানো ভিডিওতে মৌচাষে ক্ষতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়। সিরাজগঞ্জের মৌচাষী আব্দুর রশিদ মণ্ডল জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে তার খামারের ১৬০টি বাক্সে বিষ প্রয়োগে মৌমাছিগুলো মারা যায়, যার ক্ষতি প্রায় ৬ লাখ টাকা। তিনি বলেন, তরুণরা মৌচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে এবং সচেতনতা ছাড়া এই শিল্প টিকবে না।

নর্থ বেঙ্গল হানি কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজের জাহাঙ্গীর আলম জানান, পৃথিবীর ৮৬% পরাগায়ন মৌমাছির মাধ্যমে হয় এবং বর্তমানে ৬টি মৌজাতির মধ্যে ৪টি বিলুপ্তির পথে। শিসউকের সাকিউল মোর্শেদ বলেন, পরাগায়ন ছাড়া বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং মৌমাছি না থাকলে মানব সভ্যতা টিকবে না। তিনি দেশীয় মধুর ব্র্যান্ডিং ও মৌমাছির সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বিসেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. জয়নুল আবেদীন জানান, আগে কৃষিবিদরা কীটনাশকের পক্ষে থাকলেও এখন তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তিনি জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, গবেষণা, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দরকার।

বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশে কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক নিয়ম মানা হয় না। তিনি তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেন: যথাযথ রেজিস্ট্রেশন, মৌসুমি সংরক্ষণ এবং আবহাওয়া বিবেচনায় কীটনাশক প্রয়োগ।

পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশে মৌচাষকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্যোগ ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। অতিরিক্ত কীটনাশকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, ফলন কমছে এবং মৌমাছির প্রজন্ম দুর্বল হচ্ছে। তিনি বলেন, মানসম্মত দেশীয় মধু উৎপাদনে মনোযোগ দিলে তা রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

সবশেষে, বক্তারা বলেন, মৌমাছি ও মৌচাষ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো, গবেষণা করা ও সবাই মিলে কাজ করা দরকার। এতে কীটনাশকের অপব্যবহার বন্ধ হবে, মৌমাছি বাঁচবে, খাদ্য নিরাপদ হবে, পরিবেশ রক্ষা পাবে, মধুর উৎপাদন বাড়বে এবং রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।

শেয়ার করুন