নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যার মোটিভ উদঘাটন এবং ঘাতক-চক্রকে গ্রেফতারে সীমাহীন উদাসীনতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সাম্যের হত্যাকরীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। ১৬ মে সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় সুমন খানের সঞ্চালনায় এ বিক্ষোভ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলনে বহু রক্তপাতের পর ৮ আগস্টে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপামার জনতার প্রত্যাশা ছিল রাজনৈতিক হত্যার অবসান ঘটবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু সাড়ে ৮ মাসেও সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। জনজীবনের নিরাপত্তা আসেনি। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তিনি এই সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে অন্যতম বিশেষ অতিথি হিসেবে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এম এ বাতিন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চিরবিদায়ের পর আমরা সবাই আশা করেছিলাম বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ তারা উপহার দিতে সক্ষম হবেন। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আজ সবার মধ্যেই সন্দেহের উদ্রেক ঘটেছে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কর্মকাণ্ডে। তবুও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ছাড়া বিরাজমান সংকট আর সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব হবে না। এম এ বাতিন অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তো সাম্যের মতো শান্তিকামী ছাত্রনেতারা আক্রান্ত হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের আহ্বায়ক বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার সায়েম রহমান বলেন, আমরা প্রায় ১৬ বছর আন্দোলন করেছি স্বৈরাচারী সরকারকে হটানোর জন্য। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, তিনি ভারত পালিয়ে গিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম সুশাসন ফিরে আসবে। আমরাও এই সরকারকে সমর্থন করেছিলাম কিন্তু এখন দেখছি এই সরকারও নির্বাচন নিয়ে নানা টানবাহানা শুরু করেছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সেই সঙ্গে সাম্যের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জনি অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা ফ্রন্ট লাইনে ছিলেন, ছাত্রদলের তেমন নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। জনি ক্ষুব্ধচিত্তে আরো বলেন, ছাত্র শিবির হচ্ছে ছাত্রদলের অরেক পুরোনো শত্রু। ওরা আমাদের অনেক ছাত্রনেতাকে হত্যা করেছে। ছাত্রলীগে ঢুকেছিল ওরা, সেই মিছিল থেকে গুলি করে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বিগত বছরগুলোর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের সময়। জনি উল্লেখ করেন, এটা দিবালোকের মতো সত্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিবিরের কাউকে দেখা যায়নি। সাম্য হত্যার নেপথ্যে যারা মদত দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দুর্বার আন্দোলনে সব অন্যায় ভেসে যাবে।
এতে আরো বক্তব্য দেন জাসাসের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর শহীদ সরওয়ার্দী, বিএনপি নেত্রী নীরা রাব্বানী, দেওয়ান কাউসার, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি পরিষদের সভাপতি শাহাদৎ হোসেন রাজু, মওলানা আবুল কালাম শাহবাজ আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত ১৩ মে রাতে ছুরিকাঘাতে খুন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়।