১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১২:৪৪ পূর্বাহ্ন


আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না: মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না: মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না। হিউম্যানিরিটিয়া প্যাসেজ সিদ্ধান্তে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে বসে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত ২৮ এপ্রিল সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খাগড়াবাড়ি শেখ বাজারে গণসংযোগ কর্মসূচিতে এসব মন্তব্য করেন তিনি। শুধু মির্জা ফখরুল ইসলামই নন। এ ইস্যুতে দেশের সর্বত্র আলোচনা চলছে। কারণ আরকান আর্মিদের জন্য মানবিক সহয়তা প্রদানের অর্থ মায়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া। যেহেতু আরাকান আর্মি মরণপন লড়াই করছে জান্তার বিরুদ্ধে। সেখানে বাংলাদেশ একটি পক্ষ নিয়ে নেয়ার অর্থ অন্যপক্ষ প্রতিপক্ষ বানিয়ে নেয়া। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এর আগে ২৮ এপ্রিল সোমবার এক অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ)। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই নিয়ে বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলী যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’

করিডর বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালপত্র যাওয়ার ব্যবস্থা; অস্ত্র নেওয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে জানায়, রাখাইনের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এর ফলে রাজ্যটিতে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘ জানায়, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা না গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত বাকি জনগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় করিডর দিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে জাতিসংঘ।

গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনে পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের আয়ের কোনো উৎস নেই, ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চ অথবা এপ্রিল মাসের মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। তবে এর বিপরীতেও কথা রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তাঝুঁকির বাইরে থেকেছে। যদিও মানবিক করিডর দেওয়া হয় সাধারণ নাগরিকদের সহায়তার জন্য। তবে এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে থাকে।

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব 

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কক্সবাজার হয়ে জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডোর’ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’ শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।’

তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকট চলছে। দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা। প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, ‘এছাড়াও, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না।’

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর বাস্তবসম্মত একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশ। শফিকুল আলম বলেন, এই রুট ব্যবহার করে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা প্রদানে সম্মত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তবে, রাখাইনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করব।’

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্বের বড়ো কোন শক্তি এই করিডোরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা বলে তিনি দাবি করেন। প্রেস সচিব বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে একের পর এক বিদ্বেষপূর্ণ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে আমরা দেখেছি, যা এখনো চলছে। এ ধরনের প্রচারণাও তার ব্যতিক্রম নয়।’

শেয়ার করুন