৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন


গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান
এপ্রিলে ফিরতে পারেন খালেদা, নির্বাচনী রোডম্যাপের পর তারেক
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৪-২০২৫
এপ্রিলে ফিরতে পারেন খালেদা, নির্বাচনী রোডম্যাপের পর তারেক লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান


বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যরকম এক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দলের শীর্ষ নেতাকর্মীদের একটা অংশ তার বাসভবনে যেয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আসছেন। কিন্তু ব্যাতিক্রম ঘটলো এবারই। 

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকায় এবার দেশে থাকতে পারেননি। চিকিৎসা ও চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রাম। এ দুই মিলে এবারের ঈদ কেটেছে তার লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায়। সেখানে বসেই ভার্চুয়াল ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। ভার্চুয়ালে খালেদা জিয়া ছিলেন বেশ হাস্যোজ্জল। কারাগারের যাবার পর থেকে এতটা প্রাণবন্ত আর কখনই তাকে দেখা যায়নি। 

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া ঢাকার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সমবেত দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ঈদ মোবারক জানান এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৩১ মার্চ সোমবার রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই আহ্বান জানান। সোমবার (৩১ মার্চ) বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আবেগে আপ্লুত হয়েছেন দীর্ঘদিন পর এভাবে সবাইকে দেখতে পেয়ে। তিনি বলেছেন, আপনাদের এত ত্যাগ সংগ্রাম বৃথা যায়নি এবং যাবে না। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবেন।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশবাসীর যে ভোটের অধিকার তার জন্য সবাইকে মিলে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশবাসীকে আমার ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমিও সবার জন্য দোয়া করছি। 

শায়রুল আরও জানান, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সূচনা বক্তব্যে চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভিনন্দন জানিয়ে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে চেয়ারপার্সনকে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করেন।

ভার্চুয়ালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও। তারেক রহমানও দলের নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

এদিকে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বব চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, নুরুল ইসলাম মনি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মাহবুব উদ্দিন খোকন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, নাজমুল হক নান্নু, আবদুল কাইয়ুম, আফরোজা খান রীতা, এনামুল হক চৌধুরী, আবদুল হাই শিকদার, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জহিরুল ইসলাম, সৈয়দ সুজা উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ আলমগীর, এসএম ফজলুল হক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

এছাড়া খালেদা জিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীও ছিলেন এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে দলের চেয়ারপারসনকে ঈদ মোবারক জানান। পরে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন সবাই। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কারাগার থেকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এর পরে গুলশানের বাসা ‘ফিেেরাজায়’ দুই ঈদে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত বিমানে লন্ডন যান তিনি। ৩০ মার্চ রোববার লন্ডনে ছেলের বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন খালেদা জিয়া। 

কবে ফিরবেন দেশে

খালেদা জিয়া কবে ফিরবেন দেশে এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ কৌতুহল। তবে চিকিৎসা ও বিশ্রামজনিত কারণে তাকে লন্ডনেই অবস্থান করতে হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চলতি মাসের মাঝামাঝিতেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তবে একেবারেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত নয়। কেননা তার শারীরিক অবস্থার ভাল একটা উন্নতি ও ডাক্তারের পরামর্শটা এ মুহূর্তে জরুরি। আর দেশে ফিরলে হুটহাট করে যাওয়াও সম্ভবনা। তাই চিকিৎসকদের পরারর্শটা যতদূর সম্ভব নিয়েই তিনি ফিরবেন।

তারেক রহমানের ফেরার এখনও কিছু চূড়ান্ত নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন মনে করবো তার ফেরা প্রয়োজন, তখনই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। 

দলীয় সূত্রমতে, শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলে এবং ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’র চিকিৎসকদের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেলে মধ্য এপ্রিলেই দেশে ফিরবেন তিনি। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মধ্য এপ্রিলেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। তিনি দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে আছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঈদের পরেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দেশে ফিরবেন ইনশাল্লাহ। তার শারীরিক অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। আমরা তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আছি।’ তবে অন্য এক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার শিডিউল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং তার ফেরার দিনক্ষণ সম্পর্কে এই মূহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন