৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৬:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন


রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্দেহ বা বিভাজনে জুলাই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ে পড়তে পারে- সাকি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৫
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্দেহ বা বিভাজনে জুলাই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ে পড়তে পারে- সাকি


রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সন্দেহ বা বিভাজন সৃষ্টি হলে জুলাই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জোনায়েদ সাকি।

শনিবার দুপুরে এক গণসংলাপ অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী এই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই, অভ্যুত্থানের যে আকাংখা-চৈতন্য তাকে ধারণ করার জন্য আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং আগামী পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এই আকাংখা যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।”

‘‘ অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা আহ্বান জানাই, আপনাদের কাজ এই সমস্ত প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা। এমন কোনো ধারণা যাতে তৈরি না হয়, এমন কোনো অবস্থা যাতে তৈরি না হয় যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে, বিভাজন সৃষ্টি হলে আমাদের এই অভ্যুত্থান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।”

সাকি বলেন, ‘‘ রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা, আস্থা ধরে রাখা সেটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিরাজনীতিকরণ, কাউকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া… এই ধরনের একটি ইতিহাস বাংলাদেশে আছে… বাংলাদেশের জনগণ অভ্যুত্থান করে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতির কবর রচনা করেছে। কাজেই এদেশে আর কোন ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না।”

‘‘ অন্তবর্তী সরকারকে সমস্ত শক্তির মধ্যে এই জায়গা নিশ্চিত করতে হবে, এই আস্থা তৈরি করতে হবে যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে এবং সেটা সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাবে, সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ন্যুনতম জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশে আগামীর রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা হবে।সে্‌ই জায়গা আমরা সবাই মিলে করতে চাই।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা গণসংহতি আন্দোলন, আমাদের মঞ্চ গণতন্ত্র মঞ্চ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে ন্যুনতম ঐক্য তৈরি করতে চাই। যাতে করে এই রাজনৈতিক রুপান্তর জনগনের আকাংখার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে।”

‘‘ একই সঙ্গে আমরা জনগনের কাছে আহ্বান জানাই, নতুন করে গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। নতুন গণতান্ত্রিক শক্তি যদি গড়ে না উঠে এই নতুন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা একে চূড়ান্ত রূপ দেয়া আমরা হয়ত সফল নাও হতে পারি.. এই জায়গা আপনাদের প্রতি আহ্বান বাংলাদেশের সর্বত্র গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলুন।”

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ঢাকা মহানগন উত্তর-দক্ষিন শাথার যৌথ উদ্যোগে এই গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে সাকি বলেন, ‘‘ আপনারা দায়িত্ব নিয়েছে, একটা ভঙ্গুর রাষ্ট্র কাজ করছে… তাকে পূনর্গঠন করার দায়িত্ব আপনাদের পালন করতে হচ্ছে… আমরা আপনাদের সংকট, নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আমরা বুঝি।আমরা আপনাদেরকে সমর্থন করি, আমরা সবধরনের সহযোগিতা করতে চাই।”

‘‘ কিন্তু দিনের পর দিন একই সমস্যা বহাল থাকলে জনগন কিন্তু সেটা আর গ্রহন করবে না।কাজে আজকে জুলাই বিপ্লবের আহতরা যদি রাস্তায় নেমে চিকিসা দাবি করে সেটা আপনাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার হওয়া উচিত, বিব্রতকর হওয়া উচিত। আমরা অভ্যুত্থানের আহত সমস্ত যোদ্ধাদের অবিলম্বে চিকিৎসা নিশ্চিত করা তাদের জীবনের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের যতটা সক্ষমতা আছে সবাটা নিয়োগের আহ্বান জানাই। শহীদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহন করতে হবে, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে… এগুলোতে আপনাদের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহন করা দরকার।”

‘মানুষ দ্রব্যমূল্যে নাকাল’

সাকি বলেন, ‘‘ মানুষ দ্রব্যমূল্যে নাকাল। এই যে উধর্বগতি এই উধর্বগতি থামাতে হবে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নানা দিক থেকে অবণতি হচ্ছে। কেনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারছে না যাতে তারা জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হয় আপনাদের(অন্তবর্তীকালীন সরকার) সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”

‘‘ মানুষের জীবনের সংকট মোকাবিলা করতে হবে। আমরা আপনাদের সাধুবাদ জানাই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়.. এই নীতি আপনারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ”

‘আগামীর বাংলাদেশ হবে সার্বভৌম মর্যাদার’

সাকি বলেন, ‘‘ এখনো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে… আমরা পরিস্কার জবাবদিহিতা চাই এবং সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ চাই যে, এ সমস্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থের ভিত্তিতে সমস্ত চুক্তি, সমস্ত সম্পর্কে যেন নবায়ন করা হয়।”

‘‘ এই অভ্যুত্থান এই রায়ও দিয়েছে যে, আগামীর বাংলাদেশ হবে সার্বভৌম মর্যাদার বাংলাদেশ, দুনিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে থাকার বাংলাদেশ। আর যেটা করতে গেলে বাংলাদেশের যাত্রা হবে ন্যায় বিচার দিয়ে। যারা এদেশকে এভাবে ধবংসের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, যারা আমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করেছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই ন্যায় বিচার শেষে বাংলাদেশ ‍যাতে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়… বাংলাদেশে এমন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয় যাতে বাংলাদেশের সকল মানুষ নিজেকে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার অংশীদার মনে করতে পারে।”

মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান ও উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবনের সভাপতিত্বে গণসংলাপে গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল গনসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই বিপ্লবের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার তরুন নেতারা বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন