জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দলোনে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান এক অগ্রগতি ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৪ অক্টোবর সোমবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিন সদস্য বিশিষ্ট এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার। দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অচিরেই বিচার কার্যক্রম শুরু হবে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ মাসেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদি বলা হয় আরও লোক দরকার বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত টু দরকার- সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে গত ১২ অক্টোবর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ২ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। ওইদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অধ্যাপক পিয়াস করিমের স্বরণসভায় এই কথা জানান তিনি।
অন্যদিকে, গত ১৩ অক্টোবর রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বিচারক নিয়োগ হলে এ সপ্তাহেই জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হবে। শেখ হাসিনাসহ বিদেশে পলাতক ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।
সংস্থাটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে এ কথা বলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমে নিয়োগ হলেও বাকি ছিল বিচারক নিয়োগ।
প্রজ্ঞাপন জারি
১৪ অক্টোবর সোমবার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। তিন সদস্যের এ ট্রাইব্যুনালে তার সঙ্গী করা হয়েছে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে। হাই কোর্টে কর্মরত বিচারপতিদের সমমর্যাদার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এনাম চৌধুরী ভোগ করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য শফিউল আলম মাহমুদকে ৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারক করা হয়। আইন মন্ত্রণালয় সেদিন ২৩ জনকে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে, যারা শপথ নেন পরদিন।
উল্লেখ্য, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিল ছাত্র জনতার অন্তর্বর্তী সরকার।