৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৬:১৫ অপরাহ্ন


গণসংবর্ধনা সভায় মির্জা আজম এমপি
জামালপুরের উন্নয়নে এখন অনেকেই ঈর্ষান্বিত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৭-২০২৪
জামালপুরের উন্নয়নে এখন অনেকেই ঈর্ষান্বিত বক্তব্য রাখছেন মির্জা আজম এমপি


জামালপুর একসময় বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা ছিল। বাংলাদেশের ১০টি দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার মধ্যে ছিল জামালপুর। এখন জামালপুর বাংলাদেশের উন্নত জেলাগুলোর মধ্যে একটি। জামালপুরের উন্নয়ন দেখে এখন আশপাশের জেলার মন্ত্রী, এমপিরা ঈর্ষা করে। তারা বলেন, আপনার কারণে আমাদের এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। গত ৭ জুলাই রাতে উডসাইডের গুলশান টেরেসে যুক্তরাষ্ট্র জামালপুরবাসী আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি এসব কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানে এক বক্তার বসুন্ধরার জমি রেজিস্ট্রেশনের সমস্যার কথা তুলে ধরলে, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্র দুর্নীতি চলছে। তবে আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবেন, আমি সেই সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করবো। আমার কাজই হচ্ছে আপনাদের সেবা করা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক নাজমুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফরিদ আলমের পরিচালনায় সংবর্ধনা সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, কমিউনিটি লিডার সালেহ শফিক গেন্দা, শাহাদৎ হোসেন বাবু, মোর্শেদা জামান, আশরাফুজ্জামান, জিল্লুর রহমান, খন্দকার আবু মুরাদ, সাইদুর রহমান শেলী, অজিৎ ভৌমিক, নাসির ইকবাল, খন্দকার মারুফ, আলমগীর খান আলম, রবিউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, মশিউর রহমান জাস্টিস, আবুবকর সিদ্দিক, আব্দুস সামাদ আজাদ প্রমুখ।

মির্জা আজম এমপি বলেন, আসলে আমরা জনপ্রতিনিধি। আজকে যে অবস্থায় আমি এসেছি তার কৃতিত্ব আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আজকে জামালপুরের যে উন্নয়ন করেছি, সমস্ত উন্নয়নের মূলব্যক্তি হলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি রাজনৈতিকভাবে আমাকে এ পর্যায়ে এনেছেন। মির্জা আজম বলেন, টানা ৪৭ বছর এ রাজনীতির সঙ্গে আছি। কোনো গ্যাপ নেই। আমি জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছি। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেই জায়গা থেকে আমাকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে তিনবার নির্বাহী সদস্য এবং গত সম্মেলনে গঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে বর্তমান অবস্থানে এনেছেন। মির্জা আজম তার প্রতি নেতৃর অপরিসীম স্নেহ আর মমতার প্রসঙ্গে বলেন, বিরোধী দলের হুইপ এবং সরকারি দলের হুইপের মর্যাদার পর একবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগও দিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে ৫ বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেছি। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে যে মেধা আর যোগ্যতা আমার মধ্যে দেখেন না কেন এবং আমার জেলা জামালপুরের যত উন্নয়ন দেখেন-উভয়ের কৃতিত্ব আমার নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আমার এলাকার মানুষদের। তারা টানা ৭ বার আমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী করেছেন। টানা ৩৪ বছর তাদের সমর্থনে আমি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি।

 মির্জা আজম বলেন, ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম এমপি হয়েছি সর্বকনিষ্ঠ একজন হিসেবে। সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। বিএনপির মহাসচিব ছিলেন জামালপুরেরই সন্তান প্রয়াত ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার। জামালপুরের উন্নয়ন নিয়েই তার সঙ্গে বিরোধ সূচিত হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে সকল গণমাধ্যমে আমার নাম ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ইতিহাসে আমিই প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম প্রয়াত সালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে। সে সংবাদও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। মির্জা আজম বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগবিরোধী দলে থাকাবস্থায়ও আওয়ামী লীগের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল যুবলীগ। সে সময় রাজপথে লড়াই-আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের নেপথ্যেও অগ্রণী ভূমিকায় ছিল যুবলীগ। সে কারণে দেশ-বিদেশে আমার নামটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে। জামালপুর মানে মির্জা আজম আর মির্জা আজম মানে জামালপুর।

মির্জা আজম উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমাকে যখন পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়, প্রথম সপ্তাহেই জামালপুরের অপর চার জন এমপিকে নিয়ে বৈঠকে মিলিত হয় এবং জামালপুরের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি রোডম্যাপ তৈরি করি। সেই পরিকল্পনাগুলো পাঁচ বছরের মধ্যে সম্পাদনের একটি কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিলাম। সে অনুযায়ী যখন যে কাজের জন্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি, সে প্রকল্পের অনুমোদন তিনি দিয়েছেন। তার সুফল হিসেবে শুধু আমার নির্বাচনী এলাকা নয়, সারা জেলার উন্নয়নে কাজের সুযোগ পেয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের নেত্রীর সুবাদে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছি জামালপুর জেলার জন্যে। মির্জা আজম উল্লেখ করেন, ১৯৯১ সালে আমি সর্বকনিষ্ঠ এমপি থাকতে সংসদে বাজেট পাশ হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকার। সেটি ছিল সারা দেশের বাজেট।

অন্যদিকে ২০১৫ সালে আমি যখোন একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করেছিলাম, সেটি ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার, জামালপুরের উন্নয়নে। সেটি হচ্ছে জয়দেবপুর-জামালপুর ডাবল রেল লাইন। সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জামালপুর-ঢাকার মধ্যেকার দূরত্ব হবে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের। এরপর জামালপুরের কোনো মানুষকে ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্ট-বাসাভাড়া করে থাকার প্রয়োজন হবে না। মির্জা আজম বলেন, এভাবেই জামালপুরের উন্নয়ন পরিক্রমায় আবর্তিত হচ্ছে গোটা দেশের উন্নয়ন, যা সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্ব গুণে। তিনি আরো বলেন, এক সময় ঢাকা শহরে গেলে বাসায় কাজের ভুয়া, রিকশা ড্রাইভারের কথায় বোঝা যেত তারা জামালপুরের, আজকে সেই অবস্থা নেই। জামালপুরে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইকোনমিক জোন, তাঁত কারখানা, জামালপুরকে নতুন করে সাজানোসহ আরো অনেক প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলোর কাজ চলছে। এগুলো সম্পন্ন হলে জামালপুরের মানুষকে আর ঢাকায় আসতে হবে না। আপনারা যে সম্মান আমাকে দেখিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। জামালপুরের বিরোধ বিভত্তি নিয়ে তিনি বলেন, এ বিশষয়ে আমি কিছু বলবো না। তবে ফরিদ আলম বলেছেন, আজকে যারা মঞ্চে রয়েছেন, তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলেই কোনো সমস্যা হবে না। আমি চাই আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন এবং একটি আহ্বায়ক কমিটিতে আপনারাই থাকুন। নিজেদের মধ্যে আলাচনা করুন। আলোচনা করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধ থেকেই নির্বাচন দিয়ে কমিটি করুন।

অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের প্রবাসীর এ সমাবেশে জামালপুরের উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের জন্যে মির্জা আজমকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

শেয়ার করুন