১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন


স্বপ্নের সীমানায় পৌঁছাতে পারলো না বাংলাদেশ
অপ্রত্যাশিত সুযোগে সেমিতে পাকিস্তান
সালেক সুফী, অস্ট্রেলিয়া থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২২
অপ্রত্যাশিত সুযোগে সেমিতে পাকিস্তান পাকিস্তানের জয়ের নায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদী। চার উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে/ছবি সংগৃহীত


হঠাৎ করেই সুযোগ এসেছিলো। বাংলাদেশের আজ পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বপ্নের সেমি ফাইনালে পৌঁছানোর। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ব্যাটিং ব্যার্থতায় সব স্বপ্ন শেষ। অ্যাডিলেডের এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে প্রথম ১০ ওভারে ৭০/১ করে বাংলাদেশ সঠিক কক্ষপথে ছিল। কিন্তু ফর্মে ফেরা শাহীন শাহ আফ্রিদির দক্ষতায় দুর্দান্ত ভাবে ফিরে  এসে পাকিস্তান ১২৮/৭ রানে সীমিত রাখলো বাংলাদেশকে। টি২০ ক্রিকেটে এত স্বল্পপুজিতে ফাইট হয়না। এ যেন লড়াইয়ের আগেই হার। তবও সীমিত পুঁজি নিয়েও লড়েছিল বাংলাদেশ।


 কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়লাভ করে বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবালো। অপরদিকে হতাশায় নিমজ্জিত পাকিস্তানের যেখানে সম্ভাবনা ছিল জিরোর কোঠায়, তারা উঠে গেল বিশ্বকাপের প্রেস্টিজিয়াস সেমিফাইনালে। কারন নেদারল্যান্ডের কাছে দক্ষিন আফ্রিকা হেরে যাবে এটা তো কল্পনাতীত। সুযোগটা হাতছাড়া করেনি বাবর আজমরা। 

সত্য বলতে কী, দিনের শুরুতে কেউ ভাবেনি নেদারল্যান্ড উল্কাপাত ঘটিয়ে টুর্নামেন্টে ভালো খেলে থকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছিটকে দিবে। ভালো খেলেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ প্রেটিয়াকে হারালো নেদারল্যান্ড। এতেই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল, সেমী ফাইনাল। পাকিস্তান টি২০ বিশ্বকাপ জিতেছে , বাংলাদেশ জিতেনি। ফলে স্বপ্ন দেখেছিলো বাংলাদেশ খেলার শুরুতে। সীমিত সামর্থ থাকায় পারলো না বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয়ে ভারত পাকিস্তান এখন গ্রুপ ২ থেকে কোয়ালিফাই করলো অনেক নাটকীয়তার পর। পাকিস্তান অবশ্যই নেদারল্যান্ডসের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারে, সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য।

আজ এডিলেড ওভালে দিনটি ছিল রোদেলা। পাকিস্তান বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকরা এসেছিলো বর্ণিল সাজে সেজে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার মূল ভেন্যু গুলোতে খেলার সুযোগ পায় কালে ভদ্রে।  বৈষয়িক টুর্নামেন্ট না হলে মেলবোর্ন , সিডনি , ব্রিসবেন বা এডিলেডে খেলার সুযোগ হয় না। তাই ২০১৫ র মতো দলে দলে প্রবাসী  এসেছিলো। অন্তত বেশ কিছু দিন টীম টাইগার্সদের অস্ট্রেলিয়ার মূল মাঠগুলোতে দেখার সুযোগ হবে না বলে অনেকেই ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফিরে গেলো। 

টস জয় করে বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দলে ছিল তিন পরিবর্তন ছিল। ইয়াসির, শরিফুল, হাসান মাহমুদকে পরিবর্তন করে সৌম্য সরকার ,এবাদত , নাসুমকে দলে নেয়া হয়েছিল। আশা ছিল, লিটন শান্ত যোগাযোগে উড়ন্ত সূচনা পাবে বাংলাদেশ যেমন হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কাল হলো লিটনের। শান্ত ,সৌম্য রানের চাকা সক্রিয় রেখেছিলো।


কিন্তু ১০.৪ ওভারে সৌম্য আউট হবার পরের বলে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে আউট হলো সাকিব। শাদাব খানের বলটি হয়তো সাকিবের বাটে লেগে পাড়ে লেগেছিলো। বেনিফিট অফ ডাউট পাবার কথা সাকিবের। কিন্তু পায়নি। আম্পায়াররা দেননি। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা বাংলাদেশ জুড়ে। মুলত ওই ঘটনাতেই বাংলাদেশের ইনিংস গতি হারালো।


শান্ত (৫৪) আর আফিফ (২৪) ছাড়া আর কেউ শাহীন আফ্রিদির রুদ্র মূর্তির সামনে দাঁড়াতেই পারলো না। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ যোগ করতে পারলো মাত্র ৫৮ রান। ১২৭/৮ রান শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কখনোই জয়ের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। ফর্ম ফিরে পাওয়া শাহীন আফ্রিদি ৪/২২ একাই বাংলাদেশ ব্যাটিং কোনঠাসা করে দেয়। শান্তকে এই টুর্নামেন্টে অনেক পরিণত মনে হয়েছে। ওর উপর দীর্ঘ সময় নির্ভর করার প্রতিদান দেয়া শুরু কাছে শান্ত। কিন্তু লিটন ,আফিফ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাটসম্যান নিজেদের যোগ্যতা প্রমানে বার্থ হওয়ায় বাংলাদেশ যতটুকু খেলেছে তার বেশি করার সক্ষমতাই ছিল না।  


তবুও বাংলাদেশ হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো যদি তাসকিনের বলে প্রথম ওভারে সোহান ক্যাচ না ফোস্কাতো। পাকিস্তান দলের দুই স্তম্ভ বাবর , রিজোয়ান এখনো ছন্দ খুঁজে পায়নি। রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দিলে চাপে পড়তো পাকিস্তান। বাবর রিজওয়ান প্রথম উইকেট জুটিতে ৫৭ রান করে নিজেদের কিছুটা খুঁজে পেলো। তাড়াহুড়ো করেনি পাকিস্তান।


টুর্নামেন্টে প্রথম সুযোগ পেয়ে নাসুম ( ১/১৪) আঁটোসাঁটো বোলিং করেছে। রিজওয়ান (৩২) ,বাবর (২৫) ছাড়াও হারিস (৩১) আর শান মাসুদ  ( ২৪ ) রান করে পাকিস্তানের ৫ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে। পরাজয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ দলের গ্রুপ বি তে চতুর্থ। আজ লঙ্কা কান্ড  শেষে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান তৃতীয়।

নিরপেক্ষ ভাবে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ দলীয় ভাবে তেমন সাফল্য লাভ করেনি। জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছে। তবে টুর্নামেন্টে অর্জন শান্তকে পরিণত ওপেনার হিসাবে পাওয়া, লিটনের অগ্রগতি , আফিফের সক্রিয়তা ,তাসকিনের সংহারী রূপ। সাকিব কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে নি।


মনে করি বাংলাদেশ দল নিয়ে উচ্চু আশা করে ছিল দুরাশা।  টুর্নামেন্টে নেদারল্যান্ড , আয়ারল্যান্ড , জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে। বাংলাদেশ কোনো ভাবেই সেমী ফাইনালে খেলার যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলনা। পরিস্থিতির কারণেই সুযোগ এসেছিলো। কাজে লাগানো গেলো না সামর্থের অভাবে। 


শেয়ার করুন