৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৪:০৬ পূর্বাহ্ন


সরকারের স্বজনপ্রীতিতে সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
সরকারের স্বজনপ্রীতিতে সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে বক্তব্য রাখছেন হাসনাত কাইয়ূম


সরকারের এক বছরের সাফল্য ব্যর্থতার মূল্যায়নে ১২ আগস্ট মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ও এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সভায় দেশের ক্রমঘনীয়মান সমস্যাগুলোর সমাধানে ৪ দফা প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়। 

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়ার পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ১১ আগস্ট সরকারের মেয়াদের শুরুতেই আমরা লিখিতভাবে সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কর্তব্য এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপায় প্রস্তাবনা করেছিলাম। এক বছর পরে দেখা যাচ্ছে সরকার আমাদের বেশিরভাগ প্রস্তাবই আমলে নেননি। 

ফলাফল একবছরেও দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৩-৪ মাসে যদি দেশে আইনের শাসন ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে এমনকি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য আগামী নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আগের সরকারগুলোর মতো এই সরকারের বিরুদ্ধেও স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য, অর্থ পাচারের গুরুতর অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্যভাবে উঠেছে বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়। সরকারের ভুল নীতির কারণে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ বিভক্তি হয়েছে। অভ্যুত্থান কালিমালিপ্ত হয়েছে। দেশে শুনা যাচ্ছে পরাজিত শক্তির ও নতুন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি - বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সমস্যাগুলো সমাধানে এবং দেশকে আশু ভয়াবহ সংকট থেকে রক্ষায় লিখিত বক্তব্যে নিম্নোক্ত ৪ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

১। সংবিধান সংস্কারের পথ পদ্ধতি নির্ধারণে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের সাথে আলোচনার জন্য গণসংলাপের উদ্যোগ নেয়া।

২। অবিলম্বে সকল উপদেষ্টার ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তদের সম্পদের হিসাব জাতির সামনে প্রকাশ করা। 

৩। পারফর্মেন্স ইভ্যাল্যুয়েশন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন। উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিশ্চিত করা। 

৪। অবিলম্বে পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার (যেগুলোতে সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজন নেই) প্রস্তাব বাস্তবায়ন শুরু করা।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেন আমরা আশা করেছিলাম, সরকার অতীতের সরকারগুলোর স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচারের পথ থেকে বেরিয়ে এসে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত থেকে শুরু করে সংবিধান সংস্কারের টেকসই পথে জাতিকে এগিয়ে নিবেন। কিন্তু বাস্তবে সরকার মব জাস্টিস থেকে শুরু করে বিভেদ বিভক্তি তৈরি এবং সর্বোপরি সংবিধান সংস্কারের সুযোগ ব্যর্থ করার পথে হাঁটছেন। তবে সব সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনি উদ্যোগ নিলে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার অনেকাংশ এখনো পূরণ করা সম্ভব, দেশের বর্তমান সমস্যাগুলোকে ভবিষ্যতে ভয়াবহ সংকটে পরিণত হওয়া থেকে ঠেকানো সম্ভব। এ সমস্ত উদ্যোগে অতীতের মতো বর্তমানেও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন তার সীমিত সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে সরকারকে সহায়তা করবে বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু সভায় উত্থাপিত প্রস্তাবনায় সংহতি জানিয়ে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে এই সরকারের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আসছে। তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি বর্তমান সংকটের সমাধানে রাজনৈতিক দলের সংস্কারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। 

সভায় আরো আলোচনা করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সমন্বয়ক সাকিব আনোয়ার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুল খন্দকার, জাতীয় সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান রাজা, শেখ নাসিরউদ্দীন, ফরিদুল ইসলাম এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লামিয়া ইসলাম।

সভার সঞ্চালনা করেন দলের সাংগঠনিক সমন্বয়ক (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল শিকদার।

শেয়ার করুন