৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:১৩:৪০ পূর্বাহ্ন


সভাপতি বুলবুলের দুর্দান্ত সব ইনিংস
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
সভাপতি বুলবুলের দুর্দান্ত সব ইনিংস আমিনুল ইসলাম বুলবুল


বাংলাদেশের কিংবদন্তি ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিশ্ব ক্রিকেটে বরেণ্য নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট অধিনায়ক, কুশলী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান পেশাদারি ক্রিকেট থেকে অবসরের পর এসিসি এবং আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে অসামান্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আইসিসি পূর্ণ সদস্যের দেশগুলোর খেলোয়াড়, প্রশাসক বুলবুলকে অত্যন্ত দক্ষ এবং চৌকস ক্রিকেট পরিকল্পনাকারী হিসেবে মূল্যায়ন করে। আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইউএই, নেপাল, মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে চীনের মতো দেশেও বুলবুলের জনপ্রিয়তা বিষয়ে লেখক অবহিত। 

স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে বুলবুল থাকেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। লেখকের সঙ্গে বুলবুলের শ্রদ্ধা-স্নেহের অগ্রজ অনুজ সস্পর্ক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজীবন শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আমার অভিলাষ ছিল আমিনুলের বহুমুখী অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট উপকৃত হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বুলবুলের দক্ষতা, নিবেদন, সততা এবং দেশপ্রেম বিষয়ে অবহিত। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পর্যায়ে পট পরিবর্তনের পর সুযোগ হয় বুলবুলকে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার। অস্ট্রেলিয়ার উঁচু মানের দৈনন্দিন জীবন, আইসিসির উঁচু বেতন-ভাতা সাময়িকভাবে বিসর্জন দিয়ে বুলবুল দেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য বিসিবির সভাপতির গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করে। নানা কারণে বিতর্কিত, বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্নে বুলবুল দায়িত্ব নিয়ে সীমিত সময়কালে টি২০ ইনিংস খেলার ঘোষণা দেয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপুল অভিজ্ঞতা এবং যোগাযোগের কারণে বুলবুলের জানাই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য ন্যূনতম অবশ্য করণীয় বিষয়গুলো। 

বাংলাদেশের জন্য নিজের সেরা চেষ্টা নিবেদনের জন্য বুলবুল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনের মধ্বর্তী সময়ের জন্য আইসিসি থেকে সীমিত সময়ের জন্য অবকাশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। শুরুতেই ঘোষণা দেন সীমিত সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনবেন। ক্রিকেটকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেবেন। বিসিবির সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনবেন। 

মাত্র দুই মাস সময়ে তার নেতৃত্বে বিসিবি রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, সিলেট, রংপুর পরিদর্শন করে তৃণমূলে আলোড়ন তোলেন। ঢাকাসহ ঢাকার বাইরে বেশকিছু স্থানে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টিং উইকেট তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার টনি হেমিংসকে হেড কিউরেটর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং নিবিড়ভাবে তদারকীর জন্য আইসিসির প্রাক্তন এন্টি করাপশন জেনারেল ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা জানি, বুলবুল নিজে বিভিন্ন দেশে ক্রিকেট প্রশিক্ষক এবং আম্পায়ারদের উন্নততর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপক করে থাকেন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতামূলক আঞ্চলিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরুর পাশাপাশি আম্পায়ার এবং কোচদের জন্য রিফ্রেসার্স কোর্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। রাজশাহী, বরিশাল এমনকি প্রান্তিক এলাকা বান্দরবানে উন্নততর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের জন্য টি২০ এবং ওডিআই অর্থাৎ সাদা বলে পাওয়ার হিটটিং উন্নত করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন আছে। 

বুলবুলের আরো একটি সাফল্য বিসিসিআইর হুমকি, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান বোর্ডের ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসিসি সভা বয়কট সামাল দিয়ে সবার অংশগ্রহণে বৈঠক অনুষ্ঠান এবং আসন্ন এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রভাবকের দায়িত্ব পালন।

বিসিবি বিশাল তহবিল পেশাদারি ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনার জন্য সিএফও নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিপিএলকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং নাজমুল আবেদীন ফাহিম ছাড়া অধিকাংশ পরিচালক স্বপদে বহাল আছে। দক্ষ, অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপক কীভাবে একটি সংস্থার কাঠামো এবং চরিত্র পাল্টে দিতে পারে তার প্রামাণ্য উদাহরণ বুলবুল। স্বল্প সময়ে দ্রুত টি২০ ইনিংস খেলায় ব্যাস্ত বুলবুল প্রতিশ্রুতি মতো ক্রিকেট ব্যবস্থাপনার খোল নলচে পাল্টে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

আমি জানি নির্লোভ, নির্মোহ বুলবুল দীর্ঘসময় থাকবে না বিসিবিতে। আশা করি তার সূচিত উদ্যোগগুলো অনুসরণ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে তৃণমূল পর্যায়ে রেনেসাঁ হবে। 

কাকতালীয় ভাবে বুলবুল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট (জাতীয় দল এবং বয়সভিত্তিক দল) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলছে। বিসিবির পরিচালকরাও নিজ নিজ দায়িত্বে সচেতন এবং তৎপর হয়ে উঠছে।

শেয়ার করুন